সমুদ্র পৃষ্ঠে মানব দেহে বাতাসের চাপের পরিমাণ প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে এক কেজি! গড়ে বিভিন্ন মানুষের দেহের বহির্বিভাগের পরিমাণ এক বর্গমিটারের বেশী আর দুই বর্গমিটারের কম। গড়ে একটা মানুষের শরীরে বাতাসের চাপের পরিমাণ ১০০০ কেজির বেশী আর ২০০০ কেজির কম। টনের হিসাবে এক টন থেকে দুই টন। বাংলা ‘মণ’ এর হিসেবে (ঠিক মত হিসেব করলে) ৩০ মণের বেশী আর ৫০ মণের কম!
এত চাপের ভিতরে থেকে মানুষের শরীরটা একেবারে চিরে চ্যাপটা হয়ে যাবার কথা – অথচ আমরা দেখি কিছুই হয় না! কারণ টা কি? এর কারণ শরীরের ভিতর থেকেও একটা বহির্মূখী চাপ কাজ করে! এই চাপের উৎস কি? মজার বিষয় শরীরের ভিতরের প্রতিটা কোষ এক একটা জীবিত দেহখন্ড, যার প্রতিটাতেই এই চাপ আর বিপরীতমূখী প্রতিচাপ কাজ করে। এই কোষগুলো আবার তরল জাতীয় বস্তু দিয়ে পূর্ণ থাকে। প্যাসক্যালের সূত্র অনুসারে কোষের ভিতরে কোন চাপ পড়লে তা বিন্দু মাত্র না কমে সব দিকে সমান ভাবে প্রবাহিত হয়!
এখন ৫০০০ মিটারের উপরে যেখানে বাতাসের চাপ সমুদ্র পৃষ্ঠের অর্ধেকের মত, সেখানে সেখানে শরীরের ভিতর থেকে বাইরে একটা চাপ তৈরী হবে গড়পড়তা ২০ মণের মত! চিন্তা করা যায় আপনার শরীরে ২০ মণের বোঝা যে পরিমান চাপ তৈরী করবে, শরীরের ভিতর থেকে বাইরের দিকে সে পরিমান চাপ কাজ করতে থাকবে! আর এই চাপের ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া কাজ করে দেহের রক্ত এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আর কোষে !
স্বাভাবিক ভাবেই শরীরের ভিতরে – বাইরে একটা অসম চাপের প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় দশ দিকে! এই যুদ্ধ থেকে বাঁচার উপায় শরীরের প্রতিটি ক্ষুদ্র আধার, ক্ষুদ্রতম একক থেকে চাপ কমিয়ে ফেলা। কোষ যখন তার ভিতর থেকে কিছুটা তরল বের করে দেয় তখন স্বভাবিক ভাবেই তার চাপ কিছুটা প্রশমন হয়। এই তরল বের হওয়ার রাস্তা হল রক্তনালী। প্রতিটা কোষের ভিতর খাদ্য – পানীয় ও অক্সিজেন প্রবাহের দায়িত্ব রক্তনালীর। কোষের খাদ্য ঘাটতি হলে, পানি কমে গেলে এই রক্তনালীই খাবার পানি বহন করে কোষে। আবার কোষের বাড়তি কিছু অদরকারী কিছু বের করার দায়িত্ব পালনও করে রক্তনালী। কোষের ভিতরে বাড়তি চাপ রিলিজ করার জন্য তরল বের করে দিতে হলে সেই কাজটাও করে রক্তনালী। হাই অল্টিটিউড মেডিসিনের একটা সাধারণ বিষয়ও হল রক্তকে তরল রাখা।
মাত্র তিন হাজার মিটার উচ্চতায় গেলেই আপনার শরীরের ভিতর থেকে বাইরের দিকে ১০ – ১৫ মণ চাপ পড়বে! চিন্তা করা যায়? এই চাপ এর হিসাব মিটাতেই শরীরের ভিতর বিশাল যুদ্ধ শুরু হয়, আর এই যুদ্ধের কিছু ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া আলোচনার চেষ্টা করব।
একটা মজার বিষয় আছে – মানুষের শরীরে ক্ষিদা লাগে পেটে না শরীরে? শরীরে পানি শুন্যতা হলে গলায় পানি পিপাসা লাগে । একই ভাবে শরীরে সেলাইন দেওয়া হলে ক্ষুধা- পিপাসা লাগে না! মূল কারণ হল শরীরে ক্ষুধা পিপাসা অনুভূত হয় পেটে অথবা গলায়। তাই শরীর থেকে যখন তরল বের করে দেওয়ার দরকার হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুধা পিপাসা লাগে না। হাই অল্টিটিউড -এ ক্ষুধা -পিপাসা না লাগার এটাই মূল কারণ। অন্যদিকে শরীরবৃত্তীয় কাজগুলো ঠিক মত চালানোর জন্য পানি দরকার। রক্তের তরলতা ধরে রাখার জন্য পানি দরকার। সেটার জন্য জোর করে শরীরে পানি ঢুকাতে হয়! আর এখানেই সেই দ্বন্দ্ব সংঘাত।
আশা করি হাই অল্টিটিউড -এ ক্ষুধা না লাগার কারণটা স্পষ্ট হয়েছে, আর সেখানে ওজন হারানোর বিষয়টাও প্রায় একই। শরীরে প্রতিটি কোষ যখন তরল বের করে দেয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিটি কোষই ওজন হারাবে। এখানে পুরো শরীটাই ওজন হারিয়ে ফেলে বেশ অনেকটা। পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় গিয়ে আপনি যদি বাড়তি কোন পরিশ্রম না-ও করেন তবু শরীর ওজন হাড়িয়ে ফেলে প্রায় ১০%! অন্য দিকে এভারেষ্ট আরোহীরা অভিযানের পর গড়ে শরীরের শতকরা ২০ ভাগ ওজন হারিয়ে ফেলে!
হাই অল্টিটিউড সমস্য শুধু অক্সিজেনের স্বল্পতা না, বরং শরীরে উপর এই অনাহুত ২০ -৩০ মণ নেগেটিভ প্রেসার যা শরীরকে একেবারে ভর্তা বানিয়ে ফেলে !
লেখা: রাতুল বিডি
পাহাড় পাগল এই মানুষটা কাজের মাঝে খানিক সময় পেলেই ছুটে যান এ পাহাড়, সে পাহাড়ে। পাহাড়ের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞানের পরিধিটা বাড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি সে জ্ঞান অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়াই রাতুল বিডি-র জীবনের ব্রত।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
