অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পিং কিংবা বড় কোন অভিযান যাই হোক না কেন, যথেষ্ট খাবার, আরামদায়ক শেল্টার তদুপরি পর্যাপ্ত বিশ্রাম ছাড়া আপনি খুব বেশী সময় প্রতিকূল কোন পরিবেশে টিকে থাকতে পারবেন না। খাবার, বিশ্রাম এবং পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে নতুন উদ্যমে আবারো পথে নামার এবং অভিযানের চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছুনোর শক্তি যোগাবে। অতএব, যেকোন অভিযানে নামার আগেই খাবার এবং শেল্টার তৈরি করার ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট ধারণা থাকা একান্তই প্রয়োজন। আর তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রেখে, আউটডোর হ্যাকস্ -এর এই নিয়মিত পর্বে আমরা আজ শেল্টার নিয়ে আলোচনা করবো।
গত প্রবন্ধগুলোতে আমরা ক্যাম্প সাইট নির্বাচন, ক্যাম্প গুছিয়ে নেয়া, তাবুর বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি। সুতরাং আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে আবারো শেল্টার নিয়ে আলোচনার কি প্রয়োজন! আপনার প্রশ্নটা হয়ত কিছুটা যৌক্তিক, আমার কাছে টেন্ট আছে অতএব, সন্ধ্যা নামার আগেই একটা ভাল ক্যাম্পসাইট দেখে ক্যাম্প করে ফেলবো এ আর এমন কি! কিন্তু বিষয়টা যদি এমন হয়, শেল্টারের জন্য আপনার কাছে কোন তাবু বা টেন্ট নেই কিংবা যেকোন ভাবে পরিস্থিতির শিকার হয়ে আপনার সাধের টেন্টটা হাতছাড়া হয়ে গেছে অথচ রাতটা আপনার এই জঙ্গলে অথবা এই বৈরী পরিবেশে কাটাতেই হবে! এমন পরিস্থিতিতে কি করবেন তা জানা না থাকার পরিণাম কি হতে পারে তা আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আসুন আজকের আলোচনায় মনোযোগ দেই।
প্রথমেই জেনে নেই শেল্টারের ধরণ বা প্রকারভেদ সম্পর্কে। অভিজ্ঞজনদের মতে শেল্টার সাধারণত ন্যাচারাল এবং আর্টিফিসিয়াল এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে। নিচের চার্ট থেকে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
শেল্টারের প্রকারভেদ সম্পর্কে নিশ্চয়ই একটা স্পষ্ট ধারণা এতক্ষণে পেয়ে গেছেন! পার্মানেন্ট বা স্থায়ী শেল্টার সম্পর্কে আলাদা করে বলার কিছুই নেই কেননা এসব শেল্টার সাধারণত সবদিক বিবেচনা করেই বানানো হয় বিধায় এসব শেল্টার বেশ নিরাপদ এবং যথেষ্ট আরামদায়ক। সমস্যা হলো টেম্পোরারি বা অস্থায়ী এবং ন্যাচারাল শেল্টারগুলোকে নিয়ে। এসব শেল্টারগুলো যেহেতু নিজেকেই তৈরি করতে হয় কিংবা প্রকৃতির উপর নির্ভর করে করতে হয় সেহেতু এসব শেল্টারগুলো তৈরির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আরামদায়ক পরিবেশ ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন পড়ে।
আর্টিফিশিয়াল এবং ন্যাচারাল শেল্টার তৈরি করার সময় যেসব ব্যাপার একদম না ভাবলেই নয় তা হল:
- নিরাপত্তা: ঝড়ো বা জোরালো বাতাস, বৃষ্টি, তুষার পাত ইত্যাদি থেকে আপনি এবং আপনার সকল জিনিসপত্র রক্ষা করার ব্যাপারে মনোযোগ দিন। হিংস্র বন্য প্রাণী চলাচলের পথ বা ওদের বাসস্থান আছে বলে মনে হয় এমন জায়গায় শেল্টার তৈরি করা থেকে বিরত থাকুন।
- আরামপ্রদ পরিবেশ: শেল্টারের আশপাশ ছোট-খাটো বোল্ডার, এলোমেলো পড়ে থাকা কাঠখুটো, কাঁটা ঝোপ ইত্যাদি সরিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখুন। শেল্টারের জায়গা যতটা পারা যায় সমান করার চেষ্টা করুন। সরাসরি বাতাসের ধাক্কা না লাগে এমনভাবে আপনার শেল্টার তৈরি করুন এতে করে আপনার শোবার জায়গাটা বাতাস, ধোঁয়া এবং ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচবে এবং আপনি বেশ আরামদায়ক একটা ঘুম দিতে পারবেন।
- সুবিধাজনক পরিবেশ: আপনার শেল্টার এবং ক্যাম্পসাইটে সহজভাবে হাঁটাচলা করার মত জায়গা রাখুন। ভেজা জামা-জুতো শুকানোর ব্যবস্থা রাখুন। আপনার সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর জায়গা থেকে খানিক দূরে আগুন জ্বালান। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য একটা জায়গা বা পলিব্যাগ রাখুন। এসব খুটিনাটি বিষয় মাথায় রাখলে আপনার শেল্টার নিশ্চিতভাবেই বেশ আরামদায়ক এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠবে।
- সৌন্দর্য্য: প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টারত আমরা সবাই সুন্দরের পূজারী অতএব, আমাদের সকল কিছুতেই সৌন্দর্যের ছোঁয়া থাকা জরুরী। আর তাই যতটা নিখুতভাবে পারা যায় সেভাবেই আপনার শেল্টারের জায়গা নির্বাচন এবং শেল্টার তৈরি করুন।
অস্থায়ী শেল্টার তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণ:
আগেই বলেছি তাবু না থাকা বা হারিয়ে যাওয়ার কথা! তাবু থাক বা না থাক, হারিয়ে যাক বা না যাক, যাই ঘটুক না কেন আপনি এবং আপনার দলে সবসময়ই অস্থায়ী শেল্টার তৈরি করার কিছু উপকরণ সাথে নিয়েই পথে নামা উচিত। কারণ বলা তো যায়না কোথায় কোন বিপদ বা পরিস্থিতি আপনাদের অপেক্ষায়!
- পলিথিন বা প্লাস্টিক শীট: টেন্টের নিচে বিছানোর জন্য প্লাস্টিক শীট রাখার কথা আগেই বলেছি। সেটি অথবা অনুরূপ প্লাস্টিক শীট সাথে রাখুন। এটি আপনাকে অনায়াসে একটা জলরোধক ছাউনি তৈরিতে সাহায্য করবে। এমনকি ঠান্ডা বা জোরালো বাতাস থেকেও আপনাকে রাখবে সুরক্ষিত।
- স্ট্রীং বা ওয়াইর বা প্লাস্টিকের ফিতা: নিজের সাথে কিছু তার (গুনার তার) অথবা বাজারে সস্তায় বেড়া বা বাঁশ ইত্যাদি বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয় এমন প্লাস্টিকের চিকন ফিতা পাওয়া যায় সব অভিযানে এমন কিছু জিনিস সাথে রাখুন। শেল্টার তৈরিতে এসবের ব্যবহার সুনিশ্চিত।
- দড়ি: বুনো পরিবেশে যেখানেই যান না কেন সাথে বিভিন্ন দৈর্ঘ্য এবং ডায়ামিটারের দড়ি রাখুন। নানাবিদ বিপদ ছাড়াও শেল্টার নির্মানে দড়ির ভুমিকা অপরিসীম।
- ছুড়ি: সবসময় সাথে একটা ভালো ক্যাম্পিং নাইফ বা ছোট ধারালো ছুরি রাখুন। বিপদের সময় বুঝতে পারবেন এর ভূমিকা কতখানি।
কেমন হবে আপনার অস্থায়ী শেল্টার:
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ শিকার, পরিব্রাজন কিংবা নানা ধরণের অভিযানে বেড়িয়ে বনে-বাদাড়ে বা দূর্গম পরিবেশে রাত্রিযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। সেই সব মানুষের নানান অভিজ্ঞতা আর সুবিধা অসুবিধার আলোকে আজ আমরা আধুনিক তাবু বা শেল্টারগুলো তৈরি করে থাকি। পৃথিবীতে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ তাদের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদি নানান বিষয় মাথায় রেখে হরেক রকমের শেল্টার নির্মাণ করে। সেই অসংখ্য শেল্টারের মাঝ থেকে অভিযানপ্রিয় অভিজ্ঞ মানুষদের দ্বারা ব্যবহৃত এবং পরিক্ষিত চার ধরণের শেল্টার আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি। নিচে ঐ চারটি শেল্টার দেখতে কেমন এবং তাদের নাম কি তা দেয়া হল। আশা করছি আপনারা ছবি দেখেই এই শেল্টারগুলো বানানোর নিয়মটাও বুঝে যাবেন। আর না বুঝে থাকলেও ক্ষতি নেই, অবলীলায় আমাদের জানান আপনার সমস্যার কথা আমরা আপনাকে এ ব্যাপারে সাহয্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
- Lean-to Shelter
- A – Type Shelter
- Explorer’s Shelter
- Envelop Shelter
আজ এ পর্যন্তই কথা হবে আবারো আগামী অধ্যায়ে।
- “অভিযানের পরিকল্পনা”
- “অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু“
- “অভিযানের পথে কি কি সাথে নেবেন?”
- “ক্যাম্পিংয়ের আদ্যোপান্ত“
- “তাবুর নাড়ি নক্ষত্র“
- “অ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস“
- “অভিযানে আপনার সাথে আগুন আছে তো!”
- “জলপান যেন বিষপান না হয়!”
- “অভিযানের পথে কি কি খাবার নিয়ে যাবেন!”
- পরবর্তি আউটডোর হ্যাকস্ –এর জন্য চোখ রাখুন Living with Forest –এর পাতায়।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
সময় উপযোগী পোস্ট
অনেক ধন্যবাদ… :)
Nice post
Thank You…!!