ক্যাম্পিংয়ের আদ্যোপান্ত –এর পাতা যদি আপনি পড়া শুরু করেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই ধরে নিতে পারি আপনি আউটডোর হ্যাকস্ -এর নিয়মিত পর্বগুলো পড়ে এতক্ষণে হয়ত ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন নয়ত বছরের ছুটির সময়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। আমার এমন মনে হওয়ার কারণটা খুব সহজ। আমিও ক্যাম্পিংয়ের আদ্যোপান্ত লিখতে লিখেতে কখন যে বান্দরবানের পথে হাঁটা শুরু করেছি বুঝতেই পারিনি। আসুন যেতে যেতেই জেনে নিই আমরা আজ রাতে ক্যাম্প করবো কোথায় এবং কিভাবে!!!
অ্যাডভেঞ্চারের পথে সবচেয়ে জরুরী বিষয়গুলো একটা হলো পর্যাপ্ত বিশ্রাম। একটা আরামদায়ক ঘুম আপনাকে পরদিন আরো আরো পথ চলার শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে। আর এই শান্তিময় ঘুমের জন্য প্রয়োজন একটা আরামদায়ক ক্যাম্প বা শেল্টার। ভাল একটা ক্যাম্পিংয়ের প্রায় সব কিছুই নির্ভর করে ক্যাম্পসাইট নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সচেতন তার উপর।
যেকোন অভিযানের ক্ষেত্রে আপনার চলার গতি এবং বিকেলের মধ্যে আপনি কতটুকু পথ অতিক্রম করতে পারবেন তার উপর ভিত্তি করে গুগল আর্থ বা অন্য কোন ম্যাপের সাহয্যে আগে থেকেই সম্ভাব্য ক্যাম্প এরিয়া নির্বাচন করে রাখুন। এই পদ্ধতিটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে আমার ক্যাম্পিং গুলোতে। এছাড়াও আপনি পথ চলতে চলতে ঘড়ির দিকে খেয়াল রাখুন। ঘড়ির কাঁটা যখন চার ছুঁইছুঁই তখন থেকেই আশেপাশে খেয়াল করুন কোথাও ক্যাম্প করার মত ভাল জায়গা রয়েছে কিনা। সাধারণত যেকোন অভিযানে বিকেল ০৪:৩০ এর মাঝেই ক্যাম্পিংয়ের জায়গা নির্বাচন করে ফেলা উচিত। সেক্ষেত্রে রাত নামার আগেই নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে নেয়া সহজ হয়। কিন্তু কিভাবে বুঝবো এটাই সেই জায়গা, যেখানে আজ আমাদের ক্যাম্পিং করা উচিত!
আসুন ঝটপট জেনে নেয়া যাক, কি সেই ভাল ক্যাম্পিং কিংবা কিভাবে একটা ভাল ক্যাম্পসাইট নির্বাচন করা যায়?
ক্যাম্পসাইট নির্বাচন:
- প্রথমেই জেনে নিন আপনার অভিযান এলাকায় ক্যাম্পিং এর জন্য বিশেষ কোন অধিদপ্তর কিংবা ব্যক্তিগত কারো কোন অনুমতির প্রয়োজন আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে অভিযানের শুরুতেই তা নিশ্চিত করে পথে নামুন। অন্যথায় অভিযানের সমাপ্তিটা জেলখানায়ও হতে পারে।
- সন্ধ্যার অন্তত দুয়েক ঘন্টা আগেই ক্যাম্পসাইট নির্বাচন করে ফেলুন যেন অন্ধকার হবার আগেই আপনি নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেন। সবদিক থেকে অসুবিধাজনক এবং ঝুকিপূর্ণ বিধায় অন্ধকারে ক্যাম্প করার মত ভয়ংকর কিছু আর হতে পারেনা!
- টেন্ট পিচ বা তাবু খাটানোর জন্য যথাসম্ভব সমান এবং শুকনো জায়গা পছন্দ করুন। প্রয়োজনে ছোটখাটো পাথর সরিয়ে ঝুড়ো মাটি ফেলে তাবুর জায়গাটুকু সমান করে নিন। পিছল, ঢালু কিংবা এবড়োথেবড়ো জায়গায় ক্যাম্প না করাই ভাল। স্যাঁতস্যাঁতে, পোকা-মাকড়ের আধিক্য আছে এমন জায়গায় তাবু না খাটানোই ভাল।
- ক্যাম্পিংয়ের জন্য একদম খোলা জায়গা পছন্দ না করাই উত্তম। পাহাড়, বড় কোন গাছ বা ঝোপের আড়াল, যেখানে তুলনামুলক বাতাসের চাপ কম থাকবে এমন জায়গাগুলোই ক্যাম্পিংয়ের জন্য উৎকৃষ্ট। উল্লেখ্য যে বজ্রপাতের আশংকা থাকলে বড় গাছের নিচে ক্যাম্প করা থেকে বিরত থাকুন।
- ক্যাম্পিংয়ে জল একটি অপরিহার্য বিষয় অতএব, খুব কাছেই ব্যবহার কিংবা খাবার উপযোগী জলের ব্যবস্থা রয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে যদি কখনও বা কোথাও জমে থাকা জল ব্যাবহারে বাধ্য হতে হয় সেক্ষেত্রে উপরিভাগের জলটুকুই ব্যাবহার এবং সংরক্ষণ করুন।
- আপনার ক্যাম্পসাইটে পর্যাপ্ত জ্বালানীর ব্যবস্থা আছে কিনা তা জানা জরুরী। অতএব, নিজেদের সাথে থাকা ফুয়েল কিংবা গ্যাসের পরিমান সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। সেই সাথে আশেপাশে শুকনো লাকড়ি বা অনুরুপ জ্বালানী সংগ্রহ করার ব্যাবস্থা আছে কিনা জেনে নিন।
- শুকনো নদী বা পাহাড়ি ঝিরির বুকে ক্যাম্প করা উচিত নয়। নদীর উজানের দিকে কোথাও বৃষ্টি, তুষার ধস কিংবা অনুরুপ কোন দুর্যোগে আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা প্রবল। আকস্মিক বন্যা স্বল্পস্থায়ী কিন্তু ভয়ংকর তীব্র এক মুর্তিমাণ মৃত্যুর অন্য নাম!
- ল্যান্ড স্লাইড, রক ফল জোন, অ্যাভালাঞ্চ বা তুষার ধস এমনকি হিংস্র কোন বন্য প্রাণীর আনাগোনা কিংবা আক্রমনের সুবিধা এবং সম্ভাবনা রয়েছে এমন জায়গায় ক্যাম্প করা আর আত্মহত্যা করা সমার্থক হয়ে উঠতে পারে। অতএব, এসব জায়গা এড়িয়ে চলুন।
এই সব দিক বিবেচনা করে ক্যাম্পসাইট নির্বাচন তো হলো এবার কিভাবে আপনার ক্যাম্পটা গুছিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে মনযোগ দিন।
- তাবু ফেলার সময় অবশ্যই তাবুর নিচে পলিথিন বা প্লাস্টিক শীট ব্যাবহার করুন। এতে করে তাবুগুলো পরিচ্ছন্ন এবং শুকনো থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।
- দলের সবগুলো তাবুর চারপাশে যথেষ্ট খালি জায়গা রাখার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে তাবুর গাই-লাইন বা টানা দেয়ার দড়িতে পা আটকে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে এবং ক্যাম্প গ্রাউন্ডে চলাচল করতে সুবিধা হবে।
- তাবুর প্রতিটা অংশ টানটান আছে কিনা দেখে নিন। রেইন ফ্লাই বা বৃষ্টি প্রতিরোধক ছাউনিগুলো ঠিকঠাক লাগানো হয়েছে কিনা দেখে নিন।
- জোড়ালো বাতাসের ধাক্কা থেকে সুরক্ষিত থাকতে তাবুর দরজা সবসময় বাতাসের বিপরীতে রাখুন।
- রান্নার তাবু বা কিচেন টেন্ট দলের স্লীপিং টেন্টগুলো থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখুন।
- টয়লেটের জন্য ক্যাম্পগ্রাউন্ড থেকে দূরে একটা গর্ত করে সেখানে টয়লেট টেন্ট সেট করুন। পাহাড়ি ঝিরি বা নদীতে, গাছের গোড়ায়, জলের অন্যান্য উৎসের কাছাকাছি টয়লেট করা বা টয়লেট সেট করা থেকে বিরত থাকুন।
- ব্যক্তিগত এবং মূল্যবান জিনিপত্রগুলো টেন্টের ভেতরে গুছিয়ে রাখুন। খাবার দাবার এবং রান্নার সরঞ্জামাদি কিচেন টেন্টে এমনভাবে গুছিয়ে রাখুন যেন তা কোনভাবেই ভিজে না যায় কিংবা নষ্ট হয়ে না যায়। সবার হেডল্যাম্প বা টর্চ হাতের কাছে রাখুন।
- তাবুর ভেতরে আগুন ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন। খারাপ বা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় ঘুমানোর তাবুতেই রান্না করতে হলে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের উপর দায়িত্ব দিন।
- অহেতুক হৈচৈ করা, জোড়ালো ভলিউমে মিউজিক প্লেয়ার বাজানো থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনার কাছাকাছি অন্য কারো ক্যাম্প থাকে সেক্ষেত্রে অন্যের অসুবিধা হয় এমন যেকোন কাজকর্ম পরিহার করুন।
- ক্যাম্পের সকলের সুবিধা অসুবিধার খোঁজ খবর নিন।
- ক্যাম্পসাইট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘুমোতে যাবার আগে অতিরিক্ত খাবার দাবারগুলো ভালমত সংরক্ষণ করুন। আপনার পড়ে থাকা খাবার বন্য প্রাণীদের আকৃষ্ট করতে পারে অতএব, কোন খাবার যেন বাইরে পড়ে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
- ভোরে উঠে আবারো পথে নামার তাড়া থাকলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
ক্যাম্পসাইট ছেড়ে যাওয়া:
- যথাসম্ভব ভোরে উঠে ক্যাম্প গোছানো শুরু করুন।
- সবকিছু গুছিয়ে নিন। আপনার প্যাকিং লিস্টের সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন কোন কিছু ফেলে যাওয়া হচ্ছে কিনা।
- সমস্ত জিনিসপত্র এবং ব্যাকপ্যাকগুলো গুছিয়ে একপাশে রাখুন অতঃপর দলবদ্ধভাবে ক্যাম্প সাইট পরিস্কার করে রাখুন যাতে পরবর্তিতে অন্য কেউ এখানে ক্যাম্প করলে তার যেন ময়লা আবর্জনাজনিত সমস্যায় পড়তে না হয়। প্লাস্টিক বা ধাতব কোন রকম অপনশীল আবর্জনা ক্যাম্পগ্রাউন্ডে ফেলে আসবেন না এবং খাবার দাবারের উচ্ছিষ্ট কিংবা অন্য পচনশীল আবর্জনা গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দিয়ে আসুন।
- টয়লেটের গর্তে মাটি চাপা দিন সম্ভব হলে চিহ্ন দিয়ে আসুন যেন পরবর্তি কোন দল অনায়াসে বুঝতে পারে এখানে টয়লেট সেট করা হয়েছিল।
- ক্যাম্প ছাড়ার আগে সমস্ত আগুন ঠিকভাবে নেভানো হয়েছে কিনা দেখে নিন এবং নিভিয়ে ফেলুন।চলে যাবার মুহূর্তে আরেকবার দেখে নিন কোথাও চাপা আগুন আছে কিনা অথবা আগুন জ্বলছে কিনা।
- ক্যাম্প সাইটের মালিক ক্যাম্প গ্রাউন্ডের কাছাকাছি থাকলে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করুন আপনার পথচলা।
- “অভিযানের পরিকল্পনা”
- “অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু“
- “অভিযানের পথে কি কি সাথে নেবেন?”
- “তাবুর নাড়ি নক্ষত্র“
- “তাবু ছাড়াই তৈরি করুন শেল্টার“
- “অ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস“
- “অভিযানে আপনার সাথে আগুন আছে তো!”
- “জলপান যেন বিষপান না হয়!”
- “অভিযানের পথে কি কি খাবার নিয়ে যাবেন!”
- পরবর্তি আউটডোর হ্যাকস্ –এর জন্য চোখ রাখুন Living with Forest –এর পাতায়।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
