আগুন! মানব সভ্যতার বিকাশে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই আগুনই একদিন আমাদেরকে পুরো পৃথিবীতে সমস্ত কিছুর উপরে স্থান করে দিয়েছিলো। আলো, উষ্ণতা, খাবার তৈরি করা, হিংস্র প্রাণীদের কাছ থেকে নিজেদের সুরক্ষা এমনকি নানাবিধ নির্মাণে আগুনের ভুমিকা এতটাই অপরিসীম যা হয়ত এই একটা ছোট্ট প্রবন্ধে লিখে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। যতদিন পর্যন্ত পৃথিবী এবং মানবসভ্যতা টিকে থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই আগুনের মত উপকারী এবং আগুনের বিকল্প অন্য কোন কিছুই আর হয়ত খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।

দৈনন্দিন জীবনে আগুনের এই অসীম ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য তেমনি অ্যাডভেঞ্চার, ক্যাম্পিং কিংবা যে কোন অভিযানেও আগুন শুধুমাত্র প্রয়োজনের মোড়কে সীমাবদ্ধ নয় তো বটেই, উপরন্তু এই আগুনই প্রতিকূল পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে টিকে থাকার অনিবার্য উপায়। আর তাই যেকোন অভিযানে আগুন আপনার সাথে থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সমস্যাটা হলো আগুন তো আর সাথে নিয়ে বয়ে বেড়ানোর মত জিনিস নয় যে, ব্যাগে ভরলাম আর নিয়ে গেলাম। অতএব আগুনকে নয়, উপযুক্ত পদ্ধতিতে আগুন জ্বালানোর উপকরণগুলোই আমাদের সাথে নিয়ে যেতে হবে। অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু  প্রবন্ধে আমরা আগুন নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করেছিলাম। সেই আলোচনার সূত্র ধরেই আবারো আসি, আগুন জ্বালানোর জন্য কি কি জিনিস আপনার সাথে থাকা উচিত।

আগুন জ্বালানোর ক্ষেত্রে তিনটা জিনিস ভীষণ জরুরী। অভিযানের পথে এই তিন জিনিস আপনার সাথে থাকতেই হবে।

১) Fuel বা জ্বালানী: শুকনো কাঠ, কেরোসিন বা পেট্রোলের মত তরল জ্বালানী, কয়লা, গ্যাস ইত্যাদি।

২) Fire Starter: দিয়াশলাই, গ্যাস লাইটার, ম্যাগনেসিয়াম রড ইত্যাদি।

৩) Oxygen: এটা বিনামূল্যে সর্বত্র পাওয়া যায় অতএব, এটা সাথে না নিলেও চলবে।

“ফায়ার স্টার্টার হিসেবে দিয়াশলাই বা লাইটার তো সবসময় থাকেই তবুও যেকোন আউটডোর গিয়ার শপ থেকে একটা ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) ফায়ার স্টার্টার কিনে রাখবেন। এই ফায়ার স্টার্টারগুলোর বিশেষত্ব হলো এগুলো ভাঙ্গেনা, নষ্ট হয়না, ফুয়েল শেষ হয়ে যাওয়ার কোন আশংকা নেই এবং এসব ফায়ার স্টার্টার যেকোন পরিবেশ, তাপমাত্রা বা আবহাওয়ায় আগুন জ্বালাতে সক্ষম। উল্লেখ্য যে, এটির দামও খুব বেশি নয়!”

একইভাবে আগুন জ্বালানোর প্রাথমিক পর্যায়ে বা শুরুতেও তিনটা জিনিসের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য।

১) Tinder: শুকনো খড়খুটো যেগুলোতে খুব অল্পেই আগুন লেগে যায় প্রথমেই এমন কিছু হাতের কাছে রাখুন। এক্ষেত্রে শুকনো পাতা, চিকন শুকনো ডালপালার টুকরো, শুকনো ঘাঁস, গাছের শুকনো বাকল, কলা গাছের শুকনো আঁশ, ছেড়া কাগজের টুকরো, মোমে ভেজানো কাগজ, পেট্রোলিয়াম জেলি মিশ্রিত তুলা ইত্যাদি ইত্যাদি নানান জিনিস আপনি ব্যাবহার করতে পারেন।

২) Kindling: খড়কুটো বা বিয়ার গ্রীলের বিভিন্ন এপিসোড দেখে দেখে শেখা কোন পদ্ধতিতে আগুন তো জ্বালালেন কিন্তু এই আগুন তো জ্বালিয়ে রাখতে হবে তাই না! অতএব, আগুন জ্বালানো শুরু করার আগেই তা জ্বালিয়ে রাখার ইন্ধনগুলোও হাতের কাছে রাখুন। প্রাথমিকভাবে ৫/৬ ইঞ্চি মাপের টুকরো টুকরো শুকনো কাঠ ব্যাবহার করতে পারেন যা আপনার আগুনটাকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে জ্বলতে সাহায্য করবে।

৩) Fuel: আপনার সামনে এখন আগুনটা সুন্দরভাবে জ্বলে উঠেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত রশদ ছাড়া এই আগুন তো বেশীক্ষণ ঠিকে থাকবেনা সুতারাং জ্বালানী কাঠ বা আনুষঙ্গিক যেকোন জ্বালানী আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন।

এবার আসি জ্বালানী সংগ্রহ প্রসঙ্গে। আপনার সাথে মাল্টি ফুয়েল স্টোভ, পেনি স্টোভ, গ্যাস বার্নার ইত্যাদি আর সেই সাথে পর্যাপ্ত তরল জ্বালানী থাকলে তো কথাই নেই। রান্না-বান্নার যাবতীয় হ্যাপা ওসব দিয়েই সামলে নিতে পারবেন। কিন্তু যদি তা না থাকে কিংবা উষ্ণতা বা হিংস্র প্রাণীর আক্রমনের আশংকা থেকে রক্ষার জন্য আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হয় তাহলে আপনার পর্যাপ্ত জ্বালানী কাঠ সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রেও সেই তিনের-ই জয়-জয়কার। অতএব, লাকড়ি সংগ্রহেও এই তিনের কথা মাথায় রাখবেন:

১) সঠিক লাকড়ি বা কাঠ সংগ্রহ করুন: কাঁচা, ভেজা ইত্যাদি এমন কোন লাকড়ি সংগ্রহ করে লাভ নেই যেটা জ্বলবেই না!

২) সঠিক আকার নিশ্চিত করুন: ছোট ছোট টুকরো কাঠ যেমন আগুন ধরে রাখতে অসুবিধাজনক তেমনি বিশাল কোন গাছ কাঁধে করে নিয়ে এসে সেটাকে নিয়ন্ত্রন করাও বেশ ঝামেলার। অতএব, বুঝে শুনে সঠিক মাপ দেখে লাকড়ি সংগ্রহ করুন কিংবা সঠিক মাপে কেটে হাতের কাছে সাজিয়ে রাখুন।

৩) সঠিক পরিমাণ নির্ধারন করুন: সন্ধ্যা নামার আগেই সারা রাত জ্বালানোর মত কাঠ সংগ্রহে রাখুন। আর আবহাওয়া যদি খারাপ হয়, বৃষ্টি-বাদলের আশংকা থাকে তাহলে সবকিছু মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পরিমান জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে নিরাপদভাবে সংরক্ষণ করুন।

জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, বন আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সুতরাং, অহেতুক গাছপালা নষ্ট করবেন না। সবসময় মরা বা শুকনো ডালাপালা লাকড়ি হিসেবে সংগ্রহ করবেন। হাতে দা, ছুরি বা কাঠ কাটার সরঞ্জাম আছে বলেই ইচ্ছেমত এ গাছ সে গাছ কোপাকুপি করবেন না বা জীবিত ডালপালা কাটবেন না।

“NEVER PLAY WITH FIRE”

সারভাইভাল ট্রেনিংয়ের সময় আমাদের ইন্সট্রাকটর একটা কথা বলেছিলেন তা হল, “Fire is a very good Servant But, a bad Master!”। সত্যিই তাই! আগুনের উপকারীতার বিপরীতে তার ধ্বংস ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা বেশ ভাল করেই জানি। অতএব, আগুন নিয়ে যাই করুন না কেন, সাবধান!!!

আগুন জ্বালানো বা আগুন নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন, তা হল:

  • আগুন জ্বালানোর জায়গা নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যেন তা আপনার টেন্ট বা শেল্টারের সাথে বাতাসের বিপরীত দিকে এবং নিরাপদ দূরত্বে থাকে। অন্যথায় ধোঁয়ার কষ্ট যেমন পাবেন তেমনি আগুনের ফুলকি বা শিখা থেকে আপনার টেন্টে আগুন লেগে যেতে পারে।
  • ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানোর জায়গার চারপাশ পরিস্কার রাখুন যাতে করে শুকনো কিছুতে আগুন লেগে আগুনটা ছড়িয়ে যেতে না পারে।
  • আগুনের পাশে থাকার সময় সিনথেটিক বা সিল্কের কাপড়-চোপড় পড়া থেকে বিরত থাকুন। আর একান্তই যদি উপায় না থাকে সেক্ষেত্রে বাড়তি কাপড় এবং তার সাথে থাকা যেকোন ঝুল, ফিতা, লেইস, ড্র-স্ট্রিং ইত্যাদি ভাল করে গুছিয়ে রাখুন।
  • গেরো বা জট আছে এমন কাঠ বা বাঁশ ব্যবহার না করাই উত্তম। আর যদি করতেই হয় সেক্ষেত্রে গেরো কেটে বা ফাটিয়ে তারপর আগুনে দিন।
  • আগুনের তাপে বিস্ফোরিত হবার আশংকা রয়েছে বিধায় বোল্ডার, পাথুরে দেয়াল, সিমেন্টের স্থাপনার পাশ ঘেঁষে আগুন জ্বালাবেন না।
  • নিভে যাওয়া নিশ্চিত না করে কোন দিয়াশলাইয়ের কাঠি যত্রতত্র ফেলবেন না। মনে রাখবেন, একটা গাছ থেকে লক্ষ লক্ষ দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু লক্ষ লক্ষ গাছ পুড়িয়ে ছাই করে ফেলতে একটা ম্যাচের কাঠিই যথেষ্ট!
  • আগুনের প্রতি সংবেদনশীল কোন কিছু যথা, তরল জ্বালানী, কাপড়-চোপড়, দড়ি ইত্যাদি আগুন থেকে দূরে রাখুন।
  • সবসময় আগুনের পাশে পর্যাপ্ত জল, বালি এবং গাছের বড় ডাল রাখুন যাতে করে আগুন লেগে গেলে তা নিয়ন্ত্রন করতে সহজ হয়।
  • কখনোই, কখনোই, কখনোই জ্বলতে থাকা আগুন একা রেখে যাবেন না!
  • ক্যাম্পসাইট ছেড়ে যাওয়ার আগে আগুন ভালভাবে নিভিয়ে ফেলুন এবং বারবার নিশ্চিত হয়ে নিন।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

Knotsঅ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস
খাবার জলজলপান যেন বিষপান না হয়!

About the Author: Kaalpurush Apu

তথ্যপ্রযুক্তির কর্পোরেট মোড়কটা একপাশে ছুড়ে ফেলে ভবঘুরে জীবন-যাপনে অভ্যস্ত কালপুরুষ অপূ ভালোবাসেন প্রকৃতি আর তার মাঝে লুকিয়ে থাকা হাজারো রূপ রহস্য। নীলচে সবুজ বন, ছলছল বইতে থাকা নদী, দাম্ভিক পাহাড়, তুষার ঢাকা শিখর, রুক্ষ পাথুরে দেয়াল ছুঁয়ে অবিরত পথ খুঁজে ফেরা কালপুরুষ অপূ স্বপ্ন দেখেন এমন এক পৃথিবীর, যেখানে পাখিরা দিশা হারায় না, যেখানে সারাটা সময় সবুজের ভীরে লুটোপুটিতে ব্যস্ত সোনালী রোদ্দুর, যেখানে জোনাকির আলোয় আলোকিত হয় আদিম অন্ধকার, যেখানে মানুষরূপী পিশাচের নগ্নতার শিকার হয়না অবাক নীল এই পৃথিবীর কোন কিছুই!

Sharing does not make you less important!

Knotsঅ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস
খাবার জলজলপান যেন বিষপান না হয়!

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

Knotsঅ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস
খাবার জলজলপান যেন বিষপান না হয়!

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!