ট্রেকিং, হাইকিং কিংবা পাহাড়ে যাওয়া নিয়ে কথা হলে প্রায়শঃই একটা কথা শুনতে হয়, “ভাইয়া পাহাড়ে আমি খুবই স্লো, আমার ট্রেকিং স্পীড একেবারেই কম”! আপনার ট্রেকিং স্পীড কম হলেও যে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই কিংবা আপনি অনেক দ্রুত ট্রেক শেষ করতে পারলেও আপনাকে কেউ এসে মেডেল পরিয়ে দেবে এমন ব্যাপারও নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু সময় এই স্পীডের উপরেই নির্ভর করে আপনার অভিযানের অনেক কিছু। উদাহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে, পর্বতারোহণ অভিযানে দিনের আলো থাকতেই সামিট সম্পন্ন করে ক্যাম্পে ফিরে আসা খুবই জরুরী কিংবা ক্লান্তিহীনভাবে দুর্গম পথে হাঁটার পর শরীরকে একটু বেশি বিশ্রাম দিতে চাইলে তাড়াতাড়ি ক্যাম্প গ্রাউন্ডে পৌঁছুনোর বিকল্প কিই বা হতে পারে তাছাড়া ক্যাম্প গ্রাউন্ডে পৌঁছে নানাবিধ প্রস্তুতিমূলক কাজকর্ম তো রয়েছেই! অতএব, অভিযানের পথে আপনার ট্রেকিং স্পীড নিয়ে দুর্ভাবনা না হোক, ভাবনার প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে।
কিন্তু কিভাবে বাড়াবেন আপনার ট্রেকিং স্পীড? এই প্রশ্নের সবচেয়ে সহজ উত্তর হলো, নিয়মিত শরীর চর্চায় মনোযোগী হোন। দুর্গম পথে আপনি ফিট থাকা মানেই আপনার বাকী অনেককিছু ঠিকঠাক থাকা। কিন্তু এ তো শ্রেফ প্রাথমিক প্রস্তুতি! কারণ, শুধু নিয়মিত শরীরচর্চাও যে আপনাকে ট্রেকিংয়ের পথে উসাইন বোল্ট বানিয়ে দেবে তাও কিন্তু নয়! ট্রেকিং স্পীড বাড়ানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। আর তা হলো:
১) নিজের সঠিক পেইস বা গতি খুঁজে নিন:
কচ্ছপ আর খরগোশের সেই বিখ্যাত গল্পের কথা মনে আছে তো! সঠিক স্পীড আপনাকে সবসময়ই সাফল্য এনে দিতে সক্ষম। পথ চলতে গিয়ে হুড়োহুড়ি বা দৌড়াদৌড়ি নয় বরং নিজের সাথে মানানসই একটা গতি নির্বাচন করুন এবং ঐ গতিতেই স্থির রাখুন নিজেকে। দেখবেন বারবার বিশ্রাম না নিয়েও, একটুও হাপিয়ে না গিয়ে আপনি দিব্যি গান গাইতে গাইতে পথ চলেছেন!
কিন্তু নিজের ভেতরকার সঠিক গতিটা কিভাবে খুঁজে পাবেন তাই ভাবছেন তো!! ব্যাপারটা আসলে খুবই সহজ! ছোট ছোট পদক্ষেপে, একই ছন্দ এবং একই রকম গতিতে হাঁটা শুরু করুন। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাপারে মনোযোগী থাকুন। জোরে জোরে শ্বাস নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। দেখবেন পুরো বিষয়টা একসময় আপনার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এখানে কলোরাডো মাউন্টেইন স্কুলের একজন প্রশিক্ষকের কথা না বললেই নয়! জ্যাক গ্যাভেন্টা বলেন, “আমি ট্রেকিং শুরু করার সময় প্রয়োজনের বেশি একটা কাপড় সবসময় পরি। পথ চলতে চলতে যখন দেখা যায় আমি অত্যাধিক ঘেমে যাচ্ছি তখনই আমি বুঝতে পারি যে, আমি আমার নিয়মিত স্পীডের চেয়ে বেশি গতিতে হাঁটছি এবং তখনই আমি আবারও আমার গতি ঠিক করে নেই।”
২) কিভাবে এবং কখন বিশ্রাম নিতে হবে জানুন:
অভিযানের শুরুতেই ম্যাপ কিংবা গাইডবুকের সাহায্য নিয়ে আপনার পুরো পথ সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে নিন। দেখুন কোথায় বিশ্রাম নেয়ার মত সম্ভাব্য জায়গা, ঝিরি, ক্যাম্পগ্রাউন্ড কিংবা নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর জায়গা রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী আপনার বিশ্রামের জায়গাগুলো আগে থেকেই নির্বাচন করে রাখুন। চলতে চলতে তেমন জায়গাগুলোতে পৌঁছুনোর পর ব্যাকপ্যাকটা নামিয়ে রাখুন, গায়ের জ্যাকেটটা খুলে রাখুন কিংবা ঠান্ডা আবহাওয়া হলে আরো কিছু জামা-জ্যাকেট শরীরে চাপান। জল পান করুন, সাথে থাকা শুকনো খাবার, চকোলেট ইত্যাদির সদ্ব্যবহার করুন, প্রকৃতিটাকে উপভোগ করুন, ছবি তুলুন। মনে রাখবেন অহেতুক যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়া বিশ্রাম নয়, এটা আপনার পুরো দিনের রুটিন এবং গতি সবকিছুই নষ্ট করে দিতে পারে।
এটা খুবই স্বাভাবিক যে, ঝুকিপূর্ণ পিচ্ছিল পথ, হাই-এলিভেশন স্লোপ বা প্রচন্ড খাঁড়া চড়াই, তুষারে ঢাকা পথ ইত্যাদি আপনার শরীরকে খুব দ্রুত ক্লান্ত করে দিতে সক্ষম এবং আপনার শরীর বারবার বিশ্রাম চাইবে। এমন পথে বিশ্রাম নেয়ার সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন আপনার পা ঠিকঠাক মত রাখা হয়েছে কিনা। চড়াই-এর পথে সাধারণত সামনের পা সামান্য বাঁকা রেখে এবং পিছনের পা টানটান রেখে ভালভাবে গ্রীপ করে খানিকটা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নেয়া উচিত। এতে বিশ্রামের সাথে সাথে আপনার পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কমবে। চড়াইয়ের পথে ছোট ছোট বিশ্রাম আপনার শরীরের শক্তি এবং আপনার ট্রেকিং স্পীড দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
৩) আপনার গীয়ারস বা ইক্যুয়িপমেন্ট সম্পর্কে মনোযোগী হোন:
অভিযানের পথে ট্রেকিং স্পীড কমে যেতে পথ বা পথের বাঁধা যতটা না দায়ী তারচেয়ে বেশি দায়ী আপনার সাথে থাকা ইক্যুয়িপমেন্ট বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। বাজে ভাবে পিঠের সাথে বসে থাকা ব্যাকপ্যাক, খুব সহজে বের করতে না পারা ওয়াটার বটল ইত্যাদি আপনাকে বারংবার থেমে যেতে বাধ্য করবে আর তার ফলস্বরুপ আপনার টোটাল মাইলেজ যাবে কমে! বারবার দাঁড়িয়ে গিয়ে ব্যাকপ্যাক ঠিক করা, ম্যাপ বা কম্পাস বের করে পথ ঠিক করা, টেনে হিঁচড়ে জলের বোতল বের করে জল পান সবকিছু যে ট্রেকিং স্পীড কমিয়ে দিতে কতটা দায়ী তা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন।
এমন সব সমস্যায় পড়তে না চাইলে এসব বিষয়ের উপর শুরু থেকেই চোখ রাখুন। নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার ব্যাকপ্যাকটা ঠিকমত পিঠে নেয়া হয়েছে কিনা। জলের বোতল সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে হাইড্রেশন প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাকপ্যাকের সকল জিনিস ঠিকঠাকমত প্যাক করা হয়েছে কিনা দেখে নিন। ম্যাপ, কম্পাস, জিপিএস ডিভাইস, সানগ্লাস, সানস্ক্রীন, উইন্ড ব্রেকার, রেইনকোট ইত্যাদি এমনভাবে রাখুন যেন চাইলেই খুব সহজে বের করে আনা যায়।
৪) পায়ের ব্যাপারে সচেতন হোন:
অভিযানের পথে আপনার পা দুটোর মূল্য অপরিসীম। অতএব, পায়ের ব্যাপারে যথেষ্ট মনযোগ দিন। পায়ের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলে সঠিক জুতো। পর্বতের পথে উষ্ণ, ভালো গ্রীপ আছে এবং জলরোধি, জুতো যেমন প্রয়োজন তেমনি মরুভুমির পথে, তুলনামূলক কম উষ্ণ, বায়ু চলাচল করে এমন জুতো চাই। অতএব, আপনার অভিযানের ধরণ বুঝে জুতো নির্বাচন করুন। জুতো কেনার সময় ভালভাবে দেখে নিন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রীপ করে কিনা, সঠিক মাপের জুতো কিনা কিংবা অতিরিক্ত মোজা পড়লে টাইট হয়ে যায় কিনা, আপনার অভিযানের সাথে এই জুতো কতটা মানানসই ইত্যাদি সার্বিক ব্যাপারের প্রতি চোখ রাখুন। এক্ষেত্রে Quechua, La Sportiva, Koflach, Hoka One One Sky Arkali ইত্যাদি ব্র্যান্ডের জুতো হতে পারে আপনার নিশ্চিত পছন্দ।
ভুল মাপের এবং ভুল ধরণের জুতো, বারবার পথে দাঁড়িয়ে জুতোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা, জুতোর ঘঁসায় ফোসকা পড়ে যাওয়া পা, বারবার জুতোর ফিতে খুলে যাওয়া, জুতোর সুকতলা বা কুশনিং ভাল না হওয়া ইত্যাদি যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা বিপদে না পড়লে বোঝার কোন উপায় নেই। এধরণের সমস্যা আপনার ট্রেকিং স্পীড যেমন কমিয়ে দেবে তেমনি আরো নানাবিধ বিপদের মুখে আপনাকে ঠেলে দিতে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।
উপরোক্ত চারটি বিষয়ের উপর মনোযোগ দিলে আপনার সাথে আমার পরেরবার দেখা হলে “ভাইয়া আমার ট্রেকিং স্পীড অত্যন্ত কম!” কিংবা “ট্রেকিং স্পীড বাড়াতে আমি কি করতে পারি!” ইত্যাদি নানান হতাশাব্যঞ্জক কথাবার্তা আশা করি আর শুনতে হবেনা।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
ধন্যবাদ। কভার ফোটোটি কোন স্থানে তোলা দয়া করে জানাবেন?
ছবিটা টোয়াইন খাল ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় তোলা…