অ্যাডভেঞ্চার বা অভিযানে খাবার জল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ক্যাম্পিং, ট্রেকিং, বড় কোন অভিযান এমনকি দৈনন্দিন জীবনে হাইড্রেটেড থাকার মত জরুরী বিষয় হয়ত আর কিছুই নেই। ধরুন আপনার সাথে কোন খাবার নেই এমন অবস্থায়ও আপনি খাবার ছাড়া বা খাবার গ্রহণ না করে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত দিব্যি বেঁচে থাকবেন কিন্তু জল! জল পান না করে অভিযানের পথে আপনি একদিন কিংবা বড়জোর দুদিন টিকে থাকবেন! এরপর যা কিছু ঘটবে তা আপনি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না!
যখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন সে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাভাবিক নিয়মেই আমাদের শরীরে এবং ত্বকের নিচে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, একই সাথে আমরা ঘামতেও থাকি। অতঃপর সেই দ্রুত গতির রক্ত চলাচল এবং বাস্পিভূত ঘাম আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে থাকে। কিন্তু যদি এমন হয় আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত জল নেই অথবা প্রতিনিয়ত ঘাম নির্গত হওয়ার ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর জল বেরিয়ে গেছে তাহলে বিষয়টা কেমন দাঁড়াবে! ট্রেকিং বা যেকোন আউটডোর অ্যাকিটিভিটি তে আপনি ঘামবেন এতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব, এই টানাপোড়েন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে জলের বিকল্প কিছুই নেই।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও শরীরে অক্সিজেনের ভারসাম্য ঠিক রাখা, মাসল পুল না হওয়া সর্বোপরি টিকে থাকার লড়াইয়ে সবচেয়ে জরুরী বিষয় ইত্যাদি নানাবিধ কারণে সারভাইভাল পরিস্থিতিতে জলকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ধরা হয়। ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা করে বললে বলতে হয়, অভিযান বা প্রতিকূল পরিবেশে ঠিকে থাকতে হলে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরী তা যদি ক্রমিকভাবে সাজানো হয় তাহলে তা হবে-
১) Shelter.
২) Drinking Water.
৩) Fire.
৪) Food.
জলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে এখন আর কোন সন্দেহ নেই! এবার আসুন, জলপান করার কিছু নিয়ম কানুনের উপর নজর দেই। জলের অপর নাম জীবন কিন্তু, জল থেকে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ট্রপিক্যাল ওয়র্ম ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক রোগের শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় যেন-তেন বা যাচ্ছেতাই জল পান করা মৃত্যুর নামান্তরও হতে পারে! অতএব, খাবার জল সবসময় পরিশোধিত করেই পান করার চেষ্টা করুন। কোন ঝিরির পাশে যদি আপনার ক্যাম্প হয় তাহলে ঝিরির উপরের দিক থেকে খাবার জল এবং স্রোতের নিচের দিকের জল আপনার কিচেন বা আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ধোয়ামোছা, গোসল ইত্যাদি অন্যান্য কাজে ব্যবহার করুন। খাবার জলের জন্য বড়-সড় ঝিরির চেয়েও ছোট ঝিরি কিংবা মাটি বা পাথর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা জল অনেক বেশী নিরাপদ। আর যদি ঝিরি না হয় এবং আপনার যদি কোন জমে থাকা জলের উৎস থেকে জল সংগ্রহ করতে হয় সেক্ষেত্রে উপরিভাগের জলই শুধুমাত্র সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করুন।
জল পরিশোধন করবেন কিভাবে:
Boiling: জল পরিশোধিত করার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে ফুটিয়ে নেয়া। ফোটানোর ফলে জলে থাকা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার মত জীবানুগুলো অনায়াসে ধ্বংস করে ফেলা যায়। স্টিলের বা অ্যালুমিনিয়ামের বড় মগ বা পাতিলে সংগ্রহ করে আনা জল অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে ফোটাতে থাকুন। জল গরম হয়ে টগবগ করা শুরু করলে আরো অন্তত এক মিনিট ফুটিয়ে নিন। অতঃপর ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম এবং গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা করে পান করুন আপনার পরিশোধিত খাবার জল।
Filtering: বাজারের হাজারো রকমের সহজে বহনযোগ্য ফিল্টার পাওয়া যায়। সেখান থেকে আপনার পছন্দ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন ফিল্টার কিনে নিতে পারেন। ফিল্টার সাধারণত দুধরণের হয়ে থাকে। এক, কার্বন (কয়লা), বালি, নুড়ি ইত্যাদির মিশ্রন সাজিয়ে তৈরি করা ফিল্টার। দুই, আয়োডিন এবং অনুরুপ কেমিক্যাল ব্যাবহার করা ফিল্টার। দুটোই প্রায় একইরকমভাবে জল পরিশোধন করতে সক্ষম।
Chemical Treatment: জল বিশুদ্ধকরণের সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত এবং কার্যকরী উপায় হচ্ছে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট। যদিও এই পদ্ধতিতে জলে খানিকটা কেমিক্যালের ঘ্রাণ থাকবে সেটুকুই কিছুটা অসুবিধাজনক। অভিযান বা ক্যাম্পিংয়ে নিজেদের সাথে ২% গ্রেডের Iodin Tincture রাখুন। দুই ফোটা আয়োডিন টিংচার ২% ড্রপারের সাহায্যে আপনার পানির বোতলে ছেড়ে দিন অতঃপর ভালভাবে ঝাকিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পর পান করুন বিশুদ্ধ খাবার জল। Iodin Tincture –এর পরিবর্তে খাবার উপযোগী তরল ব্লীচ (Bleech) ও একই নিয়মে ব্যবহার করে পরিশোধিত জল পাওয়া যায়। এছাড়াও বাজারে নানা ধরণের বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করেও আপনি পেতে পারেন নিরাপদ বিশুদ্ধ জল। কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহারের আগে খুব ভালভাবে এর ব্যবহারবিধি পড়ুন অথবা পুরো বিষয়টা ডাক্তার বা কেমিস্টদের কাছে জেনে নিন।
***Bonus Tips: ধরুন আপনি বর্ষায় ট্রেকিংয়ে গেলেন এবং আশেপাশের সমস্ত ঝিরির জল পাহাড়ি ঢলের কারণে ঘোলা হয়ে আছে। এমতাবস্থায় সেই আপাত হলুদাভ, চা সদৃশ, বালি মিশ্রিত জল পান করা যে কতটা অস্বস্তিকর তা শুধু ভোক্তভোগীরাই জানে! এমন আশংকায় বাসার খাবার জল -এর ফিল্টার থেকে নুড়ি-বালি, কয়লা ওয়ালা ফিল্টারের যে Mineral Cartridge –টা আছে সেটা খুলে আপনার মা জানার আগেই ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলুন। এরপর পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোলা ঝিরির পাড়ে পা ছড়িয়ে বসে মনের সুখে জল ফিল্টার করুণ অতঃপর সেই পরিস্কার জল বয়েলিং পদ্ধতিতে ফুটিয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তে পান করুন। আপনার মা-য়ের হাতে ধরা পড়লে যা কিছু ঘটবে তার জন্য আমি দায়ী নই! আর ধরা পড়তে না চাইলে বাড়ির কাছের ক্রোকারিজ শপে গিয়ে আপনার পরবর্তি অভিযানগুলোর জন্য ফিল্টারের ঐ অংশটুকু কিনে রাখুন। পরিচ্ছন্ন রাখলে তা অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন।
- “অভিযানের পরিকল্পনা”
- “অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু“
- “অভিযানের পথে কি কি সাথে নেবেন?”
- “ক্যাম্পিংয়ের আদ্যোপান্ত“
- “তাবুর নাড়ি নক্ষত্র“
- “তাবু ছাড়াই তৈরি করুন শেল্টার“
- “অ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস“
- “অভিযানে আপনার সাথে আগুন আছে তো!”
- “অভিযানের পথে কি কি খাবার নিয়ে যাবেন!”
- পরবর্তি আউটডোর হ্যাকস্ –এর জন্য চোখ রাখুন Living with Forest –এর পাতায়।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
