বাতাসে হেমন্তের ঘ্রাণ। বাস থেকে নেমে ভ্যানে করে যেতে যেতে চোখে পড়তে লাগল মাঠ জুড়ে সবুজ ধান গাছে সোনালী ফসলের দোলা, অস্তাচল অভিমুখে চলতে থাকা সূর্যটার রক্তিম আভায় আলোকিত চারদিক। আমাদের গন্তব্য নড়াইল জেলার সবুজ প্রকৃতির কোলে চুপচাপ শুয়ে থাকা অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব। গাঁয়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে চলতে চলতে কখনো চোখে পড়ল ধূসর কাশ বনের সারি, কখনো দেখলাম কাঁচা পাট থেকে সোনালী আঁশ বের করে শুকোতে দেওয়া হয়েছে আর তারই পাশে পাটকাঠিগুলো এমনভাবে জড়ো করে রাখা হয়েছে দূর থেকে যেন মনে হচ্ছে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট ছোট্ট পিরামিড। পথের দুধারে ছবির মত জড়ো করে রাখা এত সব সুন্দরের ভীড় ঠেলে এসে পৌঁছলাম মধুমতি নদীর তীরে। মনের গহীন কোন কোণ থেকে ভেসে আসছে যেন চিরচেনা সেই সুর “এই মধুমতি ধানসিড়ি নদীর তীরে, নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে”। হ্যাঁ, এই সেই মধুমতি যার বুকে বয়ে চলা পালতোলা পানশি, কেয়ারী নৌকা আর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছেদের ভীড়ে বেড়ে উঠেছিলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

খেয়া ঘাটে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম নদীর জল আর বিকেলের সোনালী সূর্যটা মিলেমিশে যেন একাকার! সোনালী আভায় মনে হচ্ছে যেন জল নয়, নদীর বুকে বয়ে চলেছে গলিত সোনার বিরামহীন এক স্রোত। খেয়া পার হতেই দেখলাম নদীর তীরে গুটিকয়েক বাচ্চা ছেলে মেতে উঠেছে হাডুডু খেলায়। ঠিক কতদিন পর আমাদের এই জাতীয় খেলা খেলতে দেখলাম সেটা মনেও করতে পারিনা। কিছুটা সময় ওদের সাথে কাটিয়ে রওনা দেয়ার আগে গুগল ম্যাপে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এখান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরেই আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্য। ঠিক করলাম হেঁটেই যাব বাকী পথটা। ভ্যান চালকদের হাক-ডাক উপেক্ষা করে, ঘাটের দোকানে এক কাপ চা খেয়েই সামনের দিকে হাঁটা ধরলাম।

দুপাশে সুন্দর সাজানো, গোছানো ছিমছাম বাড়ীঘর। গাছপালায় ভরা দারুণ সুন্দর এক জায়গা। পথের ধারের কলা গাছে ঝুলে রয়েছে কলার কাদি। সারি সারি নারকেল গাছে ডাবের প্রাচুর্য। অদূরে দেখা যাচ্ছে সার বেঁধে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছেদের দল। বাড়ীর পাশের পুকুরে দাপাদাপি আর দুষ্টুমিতে ব্যস্ত ছোট ছোট দুটি ভাই। হেমন্তের ঘ্রাণ গায়ে মেখে, রাস্তার দুপাশের এমন সব আগোছালো ছবি দেখতে দেখতে একসময় এসে দাঁড়ালাম আমাদের গন্তব্য অরুণিমা রিসোর্টের মূল ফটকের সামনে। ফটক পেরিয়ে ভেতরে যেতে যেতে ভাবছিলাম ওপারের ঐ ১৫০ বিঘার বিরাট এই রিসোর্টে না জানি কি অপার বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে অবস্থিত অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব। মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল পায়ে চলা পথ সোজা চলে গেছে যতদূর চোখ যায়। এখানে সবুজের প্রাচুর্য, হাজার রকম গাছে ভরা আর এই সব গাছের যোগান দিতে এখানে রয়েছে নিজস্ব নার্সারি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও চারা বিক্রি করে অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব। নার্সারি পেরিয়ে সামনে এগোতেই দেখলাম পুকুর ভরা শাপলা। পড়ন্ত বেলাতে শাপলারা সব ঘুমে রয়েছে তাই ভাবলাম এবেলায় ওদের বিরক্ত না করে কাল খুব ভোরে, রোদ উঠে যাবার আগেই আবার না হয় আসবো। শাপলা পুকুর ছাড়িয়ে দুপাশে বিশাল সবুজ মাঠ। এক পাশের মাঠ পেড়িয়ে অদূরে কিছু ঘরবাড়ী দেখা যাচ্ছিল আর সেই মাঠে চরে বেড়াচ্ছিল কয়েকটা ঘোড়া। আরেক পাশের মাঠটায় গলফ কোর্স। মাঠের একপ্রান্তে একটা মেরি গো রাউন্ডও চোখে পড়ল। রিসেপশন পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে দেখা মিললো বেশ যত্ন করে রাখা একটা পদ্মপুকুরের! অবাক করা এই পুরো জায়গাটার পরতে পরতে যেন বিস্ময় ছড়ানো!

চারদিক নানা রঙের ফুল আর পাতাবাহারে ঘেরা দারুণ সুন্দর লাল রঙের এক দোতলা বাংলোয় আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। বাংলোর সামনে সবুজ ঘাসের লন, বাহারি ফুল, আর গাছপালার সমাহার মনটাকে একটা উদাস প্রজাপতি বানিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে নিমিষেই। ছবির মত বাংলোটার তিন দিকেই পুকুর। মনে হয় যেন ছোট্ট কোন দ্বীপের মাঝে লাল টুকটুকে এক স্বপ্নের বাড়ি। সন্ধ্যা ঘনাতে দেরী নেই খুব তাই ব্যাগটা ঘরে রেখেই ছুটলাম শেষ আলোটুকুতে যতটা সম্ভব দেখে নেবার জন্য। বিশাল এক পুকুরের উপরে কাঠের ব্রীজ পেরিয়ে আরো খানিকটা হেঁটে পৌঁছলাম আরেক বিশাল পুকুরে। পুকুর বলবো নাকি লেক! লেক বললে হয়তো এর ব্যাপ্তিটা কিছুটা বোঝানো সম্ভব হবে। সেই লেকের উপরে কাঠের ব্রীজ তৈরী করে একটা ডেক বানানো হয়েছে। সেখানে বসে দেখতে পেলাম অদূরে গাছের সারি। চকিতে মনে হচ্ছিল যেন টাঙ্গুয়ার হাওরে চলে এসেছি। সার বেঁধে দাঁড়ানো গাছগুলোর শাখা প্রশাখায় সান্ধ্যকালীন আড্ডায় ব্যস্ত শত-সহস্র বক, সারস আর পানকৌড়ির দল। অতিথি পাখিদের আসা শুরু হয়ে গেছে এখানে। আর কদিন পরে শীতটা একটু জেঁকে বসলে লাখো পাখির কলতানে ভরে উঠবে অরুণিমার এই অভয়ারণ্য।

সূর্যটা তার গায়ের সোনালী ভুষণ ছেড়ে এখন লালচে রঙ নিয়েছে। সারা দিগন্ত জুড়ে এক অপার্থিব লালচে-গোলাপী আভা। এই রিসোর্টের নাম অরুণিমা রাখার মানে তাহলে কি এই! এসব সাত-পাঁচ ভাবনার মাঝে সূর্যটা টুপ করে ঘোমটার বৌটির মত লেকের পানিতে ডুব দিতেই চারপাশের লালচে আভা ছাপিয়ে আকাশে ভেসে উঠল আধ ভাঙা একটা চাঁদ। চাঁদের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে বাংলোয় ফিরে স্নান সেরে একটু গুছিয়ে নিতে নিতেই রাতের খাবার তৈরী। লেকের ধারেই ডেক সংলগ্ন একটা জায়গায় বকুল, জবা, মাধবীলতায় ঘেরা অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব এর নিজস্ব রেস্তোঁরা এবং এস এম সুলতান কনফারেন্স হল। সেখানেই আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝিঝির ডাক আর লেকের জলে মাছেদের হুড়োহুড়ি শুনতে শুনতে চলছে খাওয়া দাওয়া। রাতের খাবার শেষে চাঁদের টানে আবারো যখন সেই ডেকটায় এসে বসলাম, মনে হচ্ছিল যেন পূর্ণিমার রাত। সেই আধ ভাঙা চাঁদের রূপালী আলো লেকের পানিতে প্রতিফলিত হয়ে রূপ নিয়েছে এক অবাক জোছনায়। সমস্ত চরাচর যেন জোছনা মাখা নির্জন এক তেপান্তর। দূরে কোথাও কোন এক চন্দ্রাহত রাতচরা পাখির ক্রমাগত ডেকে যাওয়া আর ঝিঁঝিঁপোকার ডাক ছাড়া কোথাও যেন কোন শব্দ নেই। জোছনার মায়া ছেড়ে বাংলোতে ফিরে যখন শুতে গেছি তখন বেশ রাত।

শহরের কোলাহল ছেড়ে অনেক দূরে একটু নির্জনতায়, নীরবে সময় কাটানোর জন্যই এখানে আসা। কিন্তু ভোরে ঘুম ভাঙল ভীষণ কোলাহলে। তবে এই কোলাহল নাগরিক জীবনের নয়। এ কোলাহল প্রকৃতির মায়ায় মেশানো! হাজারো পাখির কলতানে মুখর সে কোলাহল যা সদ্য ঘুম ভাঙা মনটাকে ভীষণ ফুরফুরে করে তোলে। বিছানা থেকে নেমে পায়ে স্লিপারটা গলিয়ে দরজা খুলতেই মনে হলো এ যেন এক স্বপ্নপূরীতে আছি। সবুজ ঘাসের গালিচাটা পেরিয়ে সামনেই পদ্মপুকুরে ফুটে আছে বড় বড় সব পদ্ম। দূরে হালকা কুয়াশার আস্তরন, বাতাসে শীতের আগমনী বার্তা, এর মাঝেই শিশিরে পা ভিজিয়ে হাঁটতে থাকলাম। পদ্ম পুকুর ছাড়িয়ে, মাঠগুলোকে পিছনে ফেলে হেঁটে চলেছি শাপলা পুকুরের দিকে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাঁসতে থাকা লালচে-গোলাপী শাপলাগুলো যেন আমাদের সুপ্রভাত জানানোর অপেক্ষাতেই ছিল। শাপলার পুকুরের পাশেই তৈরী করা হচ্ছে ড্রাগন ফলের বাগান। সদ্য বোনা চারাগুলো দেখেই মনে হল গাছ থেকে পেড়ে পেটপুরে ড্রাগন ফল খাবার জন্য হলেও এখানে আবার আসা উচিত!

ফলের বাগানটা থেকে ছোট্ট একটা লাল ব্রীজ পেরিয়ে গেলাম নার্সারিতে। অসংখ্য প্রজাতির গাছের চারার সংগ্রহ রয়েছে এখানে। এই অংশটুকু ছাড়াও মূল ফটকের পাশেও নার্সারি রয়েছে। ঘুরে ঘুরে এসব দেখতে দেখতে ক্ষিধেটাও লেগেছে বেশ! তাই আপাতত ঘুরোঘুরি বাদ দিয়ে সোজা চলে গেলাম রেস্তোঁরায়। সেখানে পৌঁছে ধোঁয়া উঠা খিচুড়ী আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা খেতে খেতে পরিকল্পনা হল প্রথমে আমরা যাবো ডাব পাড়া অভিযানে। অরুণিমার দুই তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়েই রয়েছে ছোট বড় অনেকগুলো লেক আর এই সব লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি অসংখ্য নারিকেল গাছ। নার্সারির দায়িত্বে থাকা মালি আর তার সহকারী মিলে গাছ থেকে ডাবগুলো নামাতেই যা দেরী, লেকের ধারে বসেই শুরু হল খাওয়া দাওয়া। প্রাণ ভরে ডাবের পানি তো খেলামই সেই সাথে ডাবের ভেতরে থাকা হালকা মালাইয়ের স্তরটাও বাদ দিলাম না!

অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব এর পুরো এলাকাটা এত বড় আর এর চারদিকে এদিক ওদিক এতকিছু আছে যে কখন কোনদিকে যাব সেটাই বুঝতে পারছিলামনা। ডাব খাওয়া পর্ব শেষে চলে গেলাম গলফ খেলার মাঠের দিকে। বিশাল সে মাঠে শুধু গলফ নয়, শিশুদের জন্যেও কিছু খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ‍মুহুর্তে কোন শিশু আপাতত নেই তাই একা একাই মেরি গো রাউন্ডে চড়লাম কিছুক্ষণ। এরপর গেলাম কুমির দেখতে। কুমিরের খাঁচার অদূরেই আছে মিনি ট্রেনের লাইন। যদিও ট্রেনটি এই মুহূর্তে বন্ধ রাখা হয়েছে তাই ট্রেনে চড়ার ইচ্ছেটা চেপে রাখতে হল। অরুণিমায় রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। সবগুলি পিকনিক স্পটই গাছপালার ছায়ায় ঘেরা মায়াময় এবং পরিচ্ছন্ন। পিকনিকের ব্যবস্থা ছাড়াও অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব এর রয়েছে একসাথে ১৫০ জন লোকের রাত্রিযাপন এবং খাবার দাবারের সুবিধা। বোট হাউজ, কাঠের বাংলো, টিনের বাড়ি, সাজানো কটেজ, সিঙ্গেল রুম, ডর্মেটরি সব মিলিয়ে রাত্রিযাপনের জন্য অরুণিমায় রয়েছে নানান ব্যবস্থা। এমনকি কেউ চাইলে নির্ধারিত ফী পরিশোধ করে অনায়াসে তাবুবাস বা ক্যাম্পিং-ও করতে পারবেন এই নান্দনিক নৈসর্গ ঘেরা অরুণিমায়।

এদিক সেদিক ঘুরোঘুরির এক ফাঁকে জানানো হল কিছুক্ষণ পর লেক থেকে মাছ ধরা হবে এবং আমরা চাইলে সেখানে থাকতে পারি। এমন সুযোগ হারানোর পাত্র আমরা নই অতএব, অরুণিমার লেক থেকে মাছ ধরা হল আমাদের সামনেই। যথাসম্ভব প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা এই মাছ সরাসরি চলে যাবে অরুণিমার রান্নাঘরে আর সেখান থেকে দারুণ লোভনীয় সুবাস ছড়াতে ছড়াতে চলে আসবে আমাদের প্লেটে সেকথা আলাদা করে নিশ্চয়ই বলতে হবেনা! এমন ফরমালিন বিহীন টাটকা মাছ এই রকম জায়গা ছাড়া পাওয়া দুস্কর! এখানকার বিশুদ্ধ আবহাওয়ার কারণে নাকি ফরমালিন মুক্ত মাছের লোভে জানিনা, খুব তাড়াতাড়িই ক্ষিধেটা চেপে ধরেছে। বাংলোয় গিয়ে কোনরকমে পরিচ্ছন্ন হয়ে সোজা দৌঁড় রেস্তোঁরার দিকে। মাছের তরকারি আর অরুণিমার ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি মিলিয়ে দুপুরের খাওয়াটা দারুণ জমেছিল। একেবারে গলা পর্যন্ত খেয়ে দেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে এক কাপ চা হাতে গিয়ে বসলাম রেস্তোঁরা সংলগ্ন বকুল তলায়। অলস কোন দুপুর কিংবা ক্লান্ত কোন বিকেল কাটানোর জন্য এই ছোট্ট বকুল তলা একেবারে আদর্শ। বকুল তলার পাশেই নির্মানাধীন একটি বিশেষ পার্ক যেটার পুরো পরিকল্পনা করা হচ্ছে বিদেশী কোন পার্কের আদলে।

অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব এর রয়েছে দারুণ এক সুইমিং পুল। পুলের পাড়ে তো অবশ্যই চাইলে পুলের জলে নেমে বসেও আড্ডা দেওয়া যাবে এমন করে ডিজাইন করা হয়েছে এটির। বাচ্চারাও যাতে এই পুলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় তাই একপাশে কম গভীর করে রেলিং দিয়ে রাখা হয়েছে পুলের কিছু অংশ। যেখানে অনায়াসে ইচ্ছেমতন দাপাদাপি করতে পারবে বাচ্চারা। পাশেই গোসল করা এবং কাপড় বদলানোর জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম তাই বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে কাটালাম সুইমিং পুলের পানিতে। ডাবের পানিতে একটা চুমুক দিয়ে সুইমিং পুলের পানিতে গা চুবিয়ে বসে থাকা, একটা ছুটির দিনে আর কি চাই!!!

অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারী গলফ কোর্স। তাই যেকোন ছুটির দিনে এখানে জমে গলফ খেলার আসর। অরুণিমার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যে কেউ চাইলেই একজন প্রশিক্ষকসহ মেতে উঠতে পারেন গলফ খেলার আনন্দে। আর আপনি যদি নিয়মিত গলফ খেলোয়াড় হয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই! প্রতিবছরই অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব এর উদ্যোগে এখানে অনুষ্ঠিত হয় গলফ টুর্নামেন্ট যেখানে আপনিও অংশগ্রহন করতে পারেন অনায়াসে। প্রকৃতির কোল ঘেঁষে আপনার প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মিটিং, গেট টুগেদার, কিংবা যেকোন আনন্দ উৎসবে বাড়তি মাত্রা যোগ করতেই অরুণিমায় রয়েছে লাউঞ্জ কিংবা কনফারেন্স হলের ব্যবস্থা।

অরুণিমার সীমানা ঘেঁষে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত। রয়েছে কাশের বন। পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত অরুণিমার সবুজ গাছগুলোতে সারা বছরই দেখতে পাবেন হরেক রকম পাখীদের মেলা। গলফ খেলে কিংবা পাখিদের পিছে ছুৃটোছুটি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও কোন সমস্যা নেই! একটা বড়শী নিয়ে লেকের ধারে বাঁধানো মাচায় বসে পড়ুন আর মাছ ধরে কাটিয়ে দিন ক্লান্ত কোন দুপুর। মাছ ধরার আনন্দ শুধু বড়দের জন্য এমন ভাবার কোন কারন নেই! আপনার দুরন্ত বাচ্চাটার জন্য অরুণিমার রয়েছে বিশেষ গভীরতায় তৈরি মাছ ধরার জায়গা। সেখানে পলো দিয়ে মাছ ধরার আনন্দে উচ্ছল একটা দিন কাটাতে পারবে আপনার দুষ্টু, মিষ্টি বাচ্চাটা।

বিকেল কিংবা সূর্যাস্তের কিছু আগে নৌকায় ভেসে নেমে পড়ুন লেকের জলে। বিস্তীর্ণ লেকে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে যোগ হতে পারে আরো কিছু মধুময় স্মৃতি। পাখিদের উড়োউড়ি, কলতান, মাছেদের ছুটোছুটি, সুর্যাস্তের বর্ণিল শোভা সব মিলিয়ে আনন্দ-মধুর এই নৌকা ভ্রমণ আপনাকে নিয়ে যাবে প্রকৃতির একেবারে গভীরে কোথাও। শ্যামল প্রকৃতির মাঝে অরুণিমা রিসোর্টটি নিঃসন্দেহে একটুখানি নিশ্বাস নেবার জায়গা। পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব কিংবা প্রিয় মানুষটিকে সাথি করে কিছুটা সময় কিংবা কয়েকটি দুরন্ত দিন এখানে কাটানো যেতে পারে আনন্দ- উচ্ছাস, হাসি আর গানে।

শুধু অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাবে বেড়ানো নয়, এখান থেকে আশে পাশের দর্শনীয় কিছু স্থানেও ঘুরে আসা যেতে পারে। খুব কাছেই আছে সুন্দরবনের করমজল, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার, কোদালা মঠ, নড়াইলে শিল্পী এস এম সুলতান স্মৃতিসৌধ, গোবরা যেখানে ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরা হয়, আছে মধুমতি আর চিত্রা নদী।

অরুণিমার রংবেরং এর গাছ পালা, ফুলের রাশি, ফলের প্রাচুর্য্য, পদ্ম পুকুরের নির্জনতা, শাপলার হাসি, আম-কাঁঠাল আর নারিকেল গাছের সারি, পাখিদের কলকাকলী, হাঁসের মত নৌকায় লেকের বুকে ভেসে বেড়ানো, মাছ ধরা, সবুজ ঘাসে কয়েকটা তিতিরের এদিক ওদিক হেঁটে বেড়ানো, ঘোড়ার চিহিহিহি ডাক, রাতে সুইমিং পুলে বসে আধ খাওয়া চাঁদটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা সব মিলিয়ে পরম প্রশান্তির এক অবাক জগৎ এই  অরুণিমা রিসোর্ট এন্ড গলফ ক্লাব।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

লালা ল্যান্ডলালা ল্যান্ড..!!!
সাকা হাফংসাকা হাফং এর খুঁটিনাটি

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

লালা ল্যান্ডলালা ল্যান্ড..!!!
সাকা হাফংসাকা হাফং এর খুঁটিনাটি

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

লালা ল্যান্ডলালা ল্যান্ড..!!!
সাকা হাফংসাকা হাফং এর খুঁটিনাটি

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!