মেঘের দেশ সাজেক -এ চলে নিত্য মেঘের আনাগোনা। এইখানে সূর্যের সোনালি রঙ খেলা করে মেঘে মেঘে। আকাশের ঘন নীল তাতে যোগ করে মায়া। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে একের পর এক সাজানো পাহাড়ের পরত। সবুজ পাহাড়ে শুভ্র সাদা মেঘের ছায়াদের লুকোচুরি দেখতে দেখতে কখন যে এখানে দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে টের পাওয়া যায়না! প্রকৃতির এই লীলা যেন চুপচাপ দেখতে দেখতে কাটিয়ে দেওয়া যাবে পুরোটা জীবন এমনই অপূর্ব জায়গা সাজেক। উঁচু নিচু ছোট বড় পাহাড়ের সারি প্রিয় সবুজ চাদরে মোড়ানো, আর তার ওপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘবালিকাদের দল। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন সেই মেঘ বরাবর, কখনো মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে আপনাকেও, আপনার পায়ের কাছে লুটোপুটি খাচ্ছে। মেঘদলের উপরে হাসছে সূর্য। রোদ ঠিকরে পড়ছে মেঘের গায়ে, সাত রঙের খেলায় মেতে উঠছে তারা। কল্পনা নয়, সত্যিই এই স্বর্গীয় দৃশ্য দেখতে পাবেন আপনি মেঘের দেশ সাজেক এ।সাজেকের মেঘের স্বর্গরাজ্যে দিনমান চলে মেঘেদের খেলা। মেঘ কখনো ঢেকে দেয় পাহাড়কে, কখনো আড়াল করে সূর্যকে আবার কখনো অভিমানে ঝরে বৃষ্টি হয়ে, তারপর আবার হেসে ওঠে এক বুক রংধনু নিয়ে।

মেঘের এমন রঙ দেখে যেন কাটিয়ে দেওয়া যায় জীবন। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।

মেঘের দেশ সাজেক এ একেক ঋতুতে দেখতে পাবেন মেঘের একেক রকম সৌন্দর্য। শুধু তাই নয় সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় মেঘ ধরা দেয় ভিন্ন ভিন্ন রূপে। ডুবন্ত সূর্যের পড়ন্ত বেলায় মেঘের রূপ দেখতে হলে যেতে হবে সাজেকে। মেঘের রাজ্যে ডানা মেলতে চাইলে কিংবা হিম হিম মেঘের রেণু গায়ে মেখে গরম কফির মগটায় তৃপ্ত চুমুক অথবা হতবিহ্বল বিবশ চোখ মেলে মেঘেদের ছুটে চলা পথের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য একরাশ মেঘ পাহাড়ের দেশ সাজেকের তুলনা হয়ত আর কিছুর সাথেই চলেনা…আর তাই আগামী কোন মেঘের দিন দেখে বেরিয়ে পড়ুন মেঘেদের এই দারুণ স্বর্গের দিকে।

বিশেষ কোন দিবসে প্রিয়জনকে চমকে দিতে চান? গতানুগতিক উপহার বা পছন্দের রেস্তোরাঁয় না খেয়ে প্রিয়জনকে নিয়ে বেড়িয়ে আসুন সাজেক। পাহাড়ে মেঘের ছায়ার খেলা, এই রোদ এই বৃষ্টি, কখনো রংধনু সব মিলিয়ে বেড়ানোর জন্য আদর্শ জায়গা মেঘের দেশ সাজেক । এখানে পাহাড় আর মেঘের নিত্য মিতালি দেখতে দেখতে, মেঘের মাঝে প্রিয়জনের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে ফেলা যায় মনের যত কথা।

মেঘের দেশে হারানো পথ। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান

সাজেক মূলত দুটো পাড়ার সমন্বয়ে। সাজেকে পৌঁছে জিপ থেকে যেখানে নামবেন সেটা রুইলুই পাড়া। এখানে আছে সেনা বাহিনীর দুইটি রিসোর্ট সহ অগণিত রিসোর্ট। আছে একটি হেলিপ্যাড। রুইলুই পাড়া ছাড়িয়ে পাহাড়ের উপরে আছে কংলাক পাড়া। এখানে পাহাড়ের চুড়া থেকে উপভোগ করা যায় মেঘের দেশের আদিগন্ত রুপ। সাজেকে যাবার সময় অন্তত একটা রাত সেখানে থাকার পরিকল্পনা করে যেতে হবে। সাজেকের রাত অপূর্ব সুন্দরী। বিশাল আকাশ জুড়ে অগুণতি তারার মেলা, অবাধ্য বালিকার মতো হঠাৎ হঠাৎ উল্কাপতন, নিশ্চুপ চার দিগন্ত, মেঘের মাঝে বজ্রের খেলা সব মিলিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোয় ভাসতে চাইলেও সাজেকের বিকল্প নেই।
পাহাড়ের কোলে মেঘের ছায়া। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।
বিলুপ্তপ্রায় লুসাই সম্প্রদায়ের মাত্র ২০টি পরিবার এখন আছে সাজেকে। লুসাই সম্প্রদায়ের হেড ম্যানের মেয়ে হেলেন নিজেদের গল্প তুলে ধরেছেন তার ‘লুসাই হেরিটেজ পার্কে’। এখানে প্রদর্শিত হয় ঐতিহ্যবাহী লুসাই পোশাক এবং তাদের সংস্কৃতির নানান নিদর্শন। লুসাই রাজা-রাণীর পোশাক ভাড়া নিয়ে পরে ছবি তুলতে পারবেন আপনি। আপনার দলে যে প্রথম রাণীর পোশাক পরবে তার জন্য পোশাকের কোন ভাড়া দিতে হবে না! রাজার প্রতি পোশাকে ভাড়া ১০০ টাকা এবং রাণীর পোশাকের ভাড়া ১৫০ টাকা করে।
পাহাড়ের পর পাহাড় আর চিরদিনের ছুঁতে না পারা মেঘের দল যখন হাতের মুঠোয় তখন মনে হয় স্বর্গ এখানেই। খুব ভোরে এখানে পায়ের কাছে জমে মেঘের সমুদ্র। ঘরের জানালা খুললেই মেঘ, বারান্দায় দাঁড়ালেই মেঘ এসে আলিঙ্গন করে। মেঘের সাথে এই আত্মিক যোগাযোগই সাজেককে এনে দিয়েছে এত জনপ্রিয়তা।
সোনালী আলোর ভীড়ে রংধনুর ছায়া। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান 
পথের খোঁজ:
রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও খাগড়াছড়ির আঁকা বাকা পাহাড়ি পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যায় মেঘের দেশ সাজেকে। ঢাকা থেকে বাসে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। ভাড়া পড়বে ৫২০ টাকা। এ ছাড়া সরাসরি দীঘিনালা যেতে চাইলে শান্তি পরিবহনের (Shanti Paribahan) বাস যায় । ভাড়া ৫৮০ টাকা। এছাড়াও বিআরটিসি (BRTC) ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়ি যায়। খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে বাইক বা সিএনজিতে যেতে পারবেন সাজেক। ভাড়া দরদাম করে নিতে পারেন। কোন গ্রুপ পেলে তাদের সাথে চাঁদের গাড়িতে করেও যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন:
এখানে থাকার জন্য সেনাবাহিনীর সাজেক রিসোর্ট আর রুন্ময় রিসোর্ট আছে। সাজেক রিসোর্টে ভি আই পি কক্ষের ১টি ১৫ হাজার টাকা, অন্যটি ১২ হাজার টাকা। অপর দুইটি ১০,০০০ টাকা করে প্রতিটি। খাবারের ব্যবস্থা আছে এখানে। রুন্ময়ের নীচ তলায় তিনটি কক্ষ আছে। প্রতিটির ভাড়া ৪৪৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে ২ জন থাকতে পারবেন। ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নেওয়া যায়। উপরের তলায় দুইটি কক্ষ আছে ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। প্রতিটি কক্ষে দুই জন থাকতে পারবেন। এটাতেও ৬০০ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত বেড নেওয়া যায়। এছাড়া আছে চারটি তাবু, প্রতি তাবুতে ২৮৫০ টাকা দিয়ে চার জন থাকতে পারবেন।

মেঘের দেশে ঠিকরে পড়া সোনা রোদ। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।
জলবুক কটেজে ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা। আলো রিসোর্টেও থাকতে পারেন। এটিতে মোট ৬ টি রুম আছে। ডাবল রুম ৪ টি (২টি বেড)। যার প্রতিটির ভাড়া ১০০০ টাকা। সিংগেল রুম ২ টি। প্রতিটির ভাড়া ৭০০ টাকা।

ইমানুয়েল রিসোর্টে ৮ টি রুম আছে। সবগুলো কমন বাথ। ১৫০০ টাকার রুমে দুইটি ডাবল বেড আছে। ৬ জন থাকতে পারবেন। ৭০০ টাকার রুমে ২ টি বেড আছে। সারা রিসোর্টে ৪ টি রুম আছে। তিনটি এটাচ বাথ। একটি কমন বাথ। প্রতি রুমের ভাড়া ১০০০ টাকা। ৪ টি নিলে ৩৬০০ টাকা। প্রতি রুমে একটি খাট আছে। ২ জন থাকা যাবে। রুম গুলো একটু ছোট। টিনের তৈরী। সোলার আছে। সাজেকে থাকার জন্য মেঘমাচাং খুবই চমৎকার জায়গা। নামের মতোই কটেজের ঘরটা যেন মেঘের ওপর মাচা পেতে তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাড়া পড়বে আনুমানিক ৩৫০০ টাকা।

হোটেল, রিসোর্ট বা কটেজে না থেকে একেবারে আদিবাসীদের ঘরেও থাকতে পারেন।  এখানে খরচও কম। জনপ্রতি ১০০-২০০ টাকা করে প্রতি রাতের জন্য।

যোগাযোগ:
সাজেক রিসোর্ট: ০১৮৫৯০২৫৬৯৪ / ০১৮৪৭০৭০৩৯৫
রুন্ময় রিসোর্ট: ০১৮৬২০১১৮৫২
জলবুক কটেজ: ০১৮২০১৮০৭৫০, ০১৫৫৮১৮০৭৫০
আলো রিসোর্ট: ০১৮৬৩৬০৬৯০৬, ০৩৭১-৬২০৬৭
মেঘ মাচাং: ০১৮২২১৬৮৮৭৭
ইমানুয়েল রিসোর্ট: ০১৮৬৫৩৪৯১৩০, ০১৮৬৯৪৯০৮৬৮
সারা রিসোর্ট: ০১৫৫৪৫৩৪৫০৭
মেঘ মাচাং: ০১৮২২১৬৮৮৭৭

আদিবাসিদের ঘরে: ০১৫৫৩০২৯৬১৭।

মেঘের প্লাবনে ভেসে যাওয়া প্রান্তর। ছবি: ড. জিনিয়া রহমান।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)
সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায়সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (পর্ব ১)

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)
সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায়সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (পর্ব ১)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)
সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায়সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (পর্ব ১)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!