আপনি দাঁড়িয়ে আছেন আর আপনার চারপাশে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কয়েক ডজন ঝর্ণা ঝরে পড়ছে। ভাবতে কেমন লাগছে? কিন্তু কেবল ভাবনাতেই নয়, বাস্তবেও এমন একটি স্থানে চলে যেতে পারেন আপনি খুব সহজে। যেখানে গেলে কেবল একসাথে এতগুলো ঝর্ণাই শুধু নয়, প্রাচীন সভ্যতার ফেলে যাওয়া স্থাপত্যের কারুকার্য দেখেও মুগ্ধ হতে পারবেন আপনি। হারিয়ে যাওয়া রোমান নগরী এমনি এক জায়গা।

হারিয়ে যাওয়া রোমান নগরী টির পরিচিতি অনেক আগে হিসারিয়া হিসেবে থাকলেও বর্তমানে বুলগেরিয়ার প্লোভদিভ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত স্থানটিকে মানুষ চেনে স্রেদনা গোরা নামে। স্রেদনা গোরার খনিজ ঝর্ণার আকর্ষণ কেবল আজকেই নয়, সেই প্রাচীন আমল থেকে মানুষকে টেনে এনেছে নিজের কাছে। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতকে প্রথম এখানে বসতি গড়ে মানুষ। ৪৬ এডিতে অনন্য সৌন্দর্য আর লাবণ্যে ভরা এই টলমলে ঝর্ণার পানি টেনে আনে রোমানদেরকেও। থ্রাসিয়নদের পরাজিত করে হিসারিয়াকে নিজের করে নেয় রোমান সভ্যতা।

পরের আড়াইশ বছরে খুব একটা মনোযোগ দেয়নি রোমানরা হিসারিয়ার দিকে। শাসক ডায়োক্লেশিয়ান প্রথম হিসারিয়াকে রোমান নগরের মর্যাদা দেন আর নামকরণ করেন ডায়োক্লেশিয়ানোপোলিস। হঠাৎ করে পাওয়া এই সৌভাগ্যকে দ্রুত নিজেদের করে নিতে প্রচুর পরিমাণ দালান-কোঠা বানানো শুরু করে স্থানীয়রা। নিজেদের ছোট ছোট ঘরের পাশাপাশি এখানে তৈরি হয় নতুন বিশাল সব রাস্তা, বিশাল অট্টালিকা, গোসলখানাসহ আরো অনেক কিছু। তবে এসময় যে অনন্য আর অন্যরকম একটা চোখে পড়ার মতন স্থাপনা তৈরি করে স্থানীয়রা সেটা হচ্ছে দেয়াল। নগরের চারপাশে সুরক্ষা দেয়াল।

প্রচন্ড শক্তিশালী এই দেয়ালটির গায়ে এতটুকু ফাঁক-ফোকর নেই। রোমান সভ্যতার সমস্ত স্থাপত্যশিল্প যেন এই বদ্ধ দেয়ালের ভেতরেই পুরে রাখা আছে। বলকান আর ইউরোপের লেট অ্যান্টিকুইটি পিরিয়ডের পর এমনটা আর দেখা যায় না। পুরো নগরকেই আগাগোড়া মুড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয় দেয়াল তৈরি করে।

২.৩ কিলোমিটার লম্বা এই দেয়ালের উচ্চতা ১১ মিটার। যদিও দক্ষিণে প্রবেশ দরজার কাছে দেয়ালের উচ্চতা ১৩ মিটার। প্রবেশদ্বারে সবসময় অত্যন্ত বলশালী, চৌকস ও দক্ষ চারজন দারোয়ান মজুদ থাকতো। দক্ষিণের এই দরজাকে দ্যা ক্যামেলস বা উটেরা বলে সম্ভোধন করা হয়। কারণ দরজা বন্ধ করে দিয়ে দরজার উপরটা অনেকটা দুইটি উটের মতন দেখতে লাগে যারা কিনা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। ২০ শতকে এই দরজাটির খানিকটা মেরামত হয়।

ভেতরে সবখানে কেবল রোমানদের ফেলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাবেন আপনি। অট্টালিকা, সৈন্যদের থাকবার স্থান, বুলগেরিয়ার সবথেকে ঠিকঠাক অবস্থায় থাকা প্রাসাদ আর অনেকগুলো চার্চের ধ্বংসাবশেষ আছে এখানে। রোমান শাসনের ফলে ৪র্থ শতকের দিকে বেশ নাম কুড়িয়ে ফেলে হিসারিয়া। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচার একে ধর্মীয় তীর্থস্থান বানিয়ে ফেলে। এতটাই উন্নতি করে স্থানটি যে ৫ম শতকেই প্লভদিভ আর স্টারা জাগোরার পর বৃহত্তম শহর হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে নিজের নাম লেখায় হিসারিয়া।

রোমান সভ্যতার ধ্বংসের পর ধীরে ধীরে নিজের আসল রূপ হারিয়ে একটি ছোট্ট গ্রামে পরিণত হয় হিসারিয়া। মাত্র কয়েকজন মানুষের ঘর দিয়ে তৈরি এই গ্রামটি নিজের বর্তমান নাম পায় তুর্কিদের সময়ে। তখন এর নামের অর্থ হয়ে দাড়ায়- প্রাসাদ!১৮৭৮ সালে বুলগেরিয়ার স্বাধীনতার পর আবার নতুন করে হিসারিয়া আর তার খনিজ ঝর্ণাগুলোকে আবিষ্কার করে মানুষ। বর্তমানে বুলগেরিয়ার অন্যতম পরিচিত এই স্থানটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

তথ্য ও ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপেডিয়া 

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণস্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণ
গোচা লাগোচা লা ট্রেকঃ পিনাকেতে লাগে টঙ্কার (পর্ব ১)

About the Author: Living with Forest

Sharing does not make you less important!

স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণস্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণ
গোচা লাগোচা লা ট্রেকঃ পিনাকেতে লাগে টঙ্কার (পর্ব ১)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণস্বল্প খরচে মালয়েশিয়া ভ্রমণ
গোচা লাগোচা লা ট্রেকঃ পিনাকেতে লাগে টঙ্কার (পর্ব ১)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!