আধুনিকায়নের এই যুগে যাতায়াত ব্যবস্থাতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। আজ থেকে ৫০ বছর আগেও বিমান যাত্রার ততটা চল ছিল না। এখন যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিযোগিতা সেই সাথে তৈরী হয়েছে হাজারো নতুন গন্তব্য আর আকাশ পথে যাতায়াতের সুব্যবস্থা। তবে আকাশ পথে যাত্রা কিন্তু সড়ক বা নদী পথের মত নয় যে উঠে বসলাম আর গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। কিছু নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় আকাশ পথে যাত্রায়। আর তাই প্রথম আকাশ যাত্রার পূর্বে সেগুলো জেনে নেওয়াই ভালো।
চেক ইন সময়: প্লেনে উঠার আগে এয়ার লাইন্সের কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস নিতে হয়। এই কাউন্টার আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো উড্ডয়নের এক ঘন্টা আগে বন্ধ হয়ে যায়। তাই অবশ্যই প্লেন ওড়ার নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে কাউন্টারে পৌঁছাতে হবে। আপনার সাথে যদি ছোট বাচ্চা থাকে বা বেশী লাগেজ থাকে তবে রাস্তার জ্যাম বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন। উল্লেখ্য উড্ডয়নের তিন ঘন্টা আগে চেক ইন কাউন্টার খোলে।
বোর্ডিং পাস আর ইমিগ্রেশন: বিমান বন্দরে পৌঁছেই বোর্ডিং পাস নিয়ে নিবেন। পছন্দের সিটে বসতে চাইলে পাস নেবার সময় অনুরোধ করতে পারেন। আমি পাসপোর্টটা এগিয়ে দিতে দিতে বলতে থাকি প্লিজ আমাকে জানালার ধারে সিট দিবেন। আকাশ পাড়ি দিতে দিতে বিমানের বাইরে মেঘের মেলা বা পাখির চোখে পৃথিবী দেখার লোভে আমি বরাবরই জানালার ধারে বসতে আগ্রহী। অনেকের আবার আইল সিট পছন্দ। এতে নিজের ইচ্ছে মত যখন তখন অন্যকে বিরক্ত না করেই সিট থেকে ওঠা যায়। দেশ ত্যাগের পূর্বে একটা ইমিগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেটার জন্য একটা কলম সাথে রাখুন।বোর্ডিং পাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে ইমিগ্রেশনের দিকে। ইমিগ্রেশনে ঢোকার মুখে ফর্মটা জমা দিতে হবে। এরপর সাবলীল ভাবে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার জন্য পাসপোর্টে বহির্গমন সীল নিয়ে নিবেন।
সিকিউরিটি চেক: ওয়েটিং লাউঞ্জে ঢোকার আগে বা প্লেনে উঠার আগে আপনাকে সিকিউরিটি চেকের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্লেনে অনেক কিছুই নেওয়া যায় না। আগেই জেনে নিন সাথে কি কি নিতে পারবেন আর কি নিতে পারবেন না। সাধারণত ক্যারি অন লাগেজের ওজন এয়ার লাইন্স ভেদে ৭-১০ কেজি হয়ে থাকে। ধারালো কোন কিছু সাথে অর্থ্যাৎ ক্যারি অন লাগেজে রাখতে পারবেন না। তরল কোন কিছু ১০০ ম এল বেশী নিতে পারবেন না। আবার ৩০০ এম এল এর বোতলে ৫০ এমএল তরলও নিতে পারবেন না। বোতলের ধারণ ক্ষমতা সর্ব্বোচ্চ ১০০ এম এল হলে সেটা সাথে নিতে পারবেন। চেকের সময় জুতো, জ্যাকেট বা বেল্ট খুলে চেক করা হয়। তাই এমন জুতো পরুন যেটা খুলতে সহজ হয়। জ্যাকেট খুলে হাতে নিয়ে নিন। পকেটের চাবি, ঘড়ি ইত্যাদি সব খুলে আলাদা করে ট্রেতে দিয়ে দিন চেকের জন্য। সাথে ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট থাকলে সেটাও ব্যাগ থেকে বের করে আলাদা করে চেকের জন্য দিতে হবে।
ওয়াশরুম ব্যবহার: বিমানে সীমিত সংখ্যক ওয়াশরুম থাকে তাই সম্ভব হলে উঠার আগেই ঘুরে আসুন ওয়াশরুম থেকে। বিমানের ওয়াশরুম ব্যবহার করে এমন করে রেখে আসুন যাতে পরের জনের জন্য ব্যবহার করতে কোন সমস্যা না হয়। মনে রাখবেন ওয়াশরুমের পানি খাবার উপযোগী নয়।
বিমানের ভেতরে সৌজন্যতা: বিমানে উঠে নিজের আসনে বসেই প্রধান কাজ হচ্ছে সিট বেল্ট বেঁধে নেয়া। সিট বেল্ট কিভাবে বাঁধতে হবে তা শুরুতেই জানিয়ে দিবে বিমান বালা। সেটা শুনেও বুঝতে না পারলে পরে সাহায্য নিন বিমানবালাদের। সিট বেল্ট বেঁধেই দেখে নিন আপনার Oxygen Mask কোথায় রাখা আছে এবং কিভাবে ব্যবহার করতে হবে। বিমানের ভেতরে আপনার নিজের ভদ্রতা এবং বিনয়ের দিকে খেয়াল রাখা দরকার। এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে আপনার পাশের সিটের যাত্রী বিরক্ত বোধ করে বা তার কোন সমস্যার কারণ হতে পারে। পাশের সিট খালি থাকলে তাতে পা তুলে বসাও ভীষণ অভদ্রতা। ফ্লাইটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা আপনার নিজের দায়িত্ব, খাবার খেয়ে তা নির্ধারিত স্থানে ফেলুন। বিমানে ফোন কিংবা রেডিও ওয়েব জাতীয় সকল তরঙ্গ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ফোন এরোপ্লেন মুডে রাখুন। দীর্ঘ বিমান যাত্রাকালে সিটটা একটু পিছিয়ে দিয়ে আরাম করে বসুন। বিমানে সরবরাহ করা বালিশ বা কম্বল ব্যবহার করে আরাম করতে পারেন। অধিকাংশ বিমানে গান শোনা, গেম খেলা বা সিনেমা দেখার ব্যবস্থা থাকে। এগুলো ব্যবহার করতে না পারলে বিমানবালার সাহায্য নিন। বিমান বালা এবং ক্রুদের সাথে সন্মানজনক আচরণ করুন। বিমান উড্ডয়নের সময় এবং নামার সময় ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এই দুই সময় ঝাঁকির অনুভূতি হবে, এতে ভয় পাবার বা ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। রক্তচাপের সমস্যা থাকলে সাথে প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে রাখুন। দীর্ঘক্ষণ বিমানের ভিতরে থাকলে ত্বক শুস্ক হয়ে যেতে পারে, তাই সাথে পেট্রোলিয়াম জেলী বা ময়েশ্চারাইজিং লোশন রাখতে পারেন। বিমান থেকে নামার সময় আপনার সাথে থাকা ব্যাগ এবং জিনিসপত্র সব ভালোভাবে গুছিয়ে নিন এবং মনে করে সব সাথে নিয়ে নিন। বিমান থামার সাথে সাথেই তাড়াহুড়ো করবেন না, শান্ত ভাবে ধীরে সুস্থে, আপনার সামনের জনেরা নামার পরে নামার প্রস্তুতি নিন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফ্লাইটে দেখেছি বিমান মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথে সবাই ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় প্লেন থেকে নামার জন্য, বিমান হয়তো তখনো চলছে, সিটবেল্টের সিগনাল তখনও অফ হয় নি। কিন্তু সবাই সিট বেল্ট খুলে দাঁড়িয়ে ভীষণ বিশৃংখল অবস্থা তৈরী করেছে। এতে করে বিমান নিয়ন্ত্রনে কিছু সমস্যা তো হয়ই তার সাথে বিদেশী নাগরিকদের সামনে ভীষণ লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রথম আকাশ যাত্রা এমনকি পরবর্তী সময়েও এই টিপসগুলো আপনাদের কাজে দেবে আশা করছি। শুভ হোক আপনাদের যাত্রা।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।