নারকেল দিয়ে বানানো ভাপা পিঠার গন্ধ বাতাসে ভেসে এলে বুঝে যাই আসছে শীত। ভোরের হিমেল শান্ত হাওয়াও মনে করিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা। শীত মানেই ছুটির সময়টা গরম কম্বলে নিজেকে মুড়ে নিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকা, সাথে থাকতে পারে এক কাপ গরম চা আর প্রিয় একটা গল্পের বই। আবার এই শীতের সময়টুকুতেই আমাদের দেশে এদিক ওদিক ঘিরে বেড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় যাতায়াতে অসহ্য গরমটা সহ্য করতে হয় না আবার শীতঋতুও তার নিজস্ব সাজে সেজে ওঠে যার আকর্ষণে গরম কম্বল ঠেলে ফেলে বাইরে বেরিয়ে পড়তেই হয়।

শহুরে উষ্ণতায় শীত অতটা সুবিধা করতে না পারলেও গ্রামের দিকে কিন্তু বেশ জেঁকেই বসে শীতের বুড়ি। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর, খেজুরের রস, হরেক রকম পিঠা, হাঁসের মাংস, কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোহানো, সেই আগুনে মিষ্টি আলু পুড়িয়ে খাওয়া, পৌষ মেলা, সরিষার ক্ষেত ইত্যাদি অনেক কারণেই শীতে ভ্রমণ অনেক আনন্দের। তবে এই শীতে বেড়ানোর কিছু কিছু বাড়তি সতর্কতা নিতেই হবে আপনাকে তা না হলে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি এইসব অসুস্থতা আপনাকে কাবু করে ভ্রমণের আনন্দ নষ্ট করবে। শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতেই হবে।

শীতের যথাযথ পোশাক:

শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে শীতের যথাযথ পোশাক নিয়ে নিন যা আপনার ভ্রমণকে করবে আরামদায়ক। কোথায় যাচ্ছেন সেই অনুযায়ী বুঝে নিন শীতের পোশাক। পাহাড়ে বা হাড় কাঁপানো শীতের জায়গায় ঘুরতে গেলে খুব বেশি গরম কাপড়ের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে হালকা ওজনের গরম পোশাক নিন। সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে মোটামুটি মানের গরম  কাপড়েই কাজ চলে যাবে। সাথে রাখুন অতিরিক্ত মাফলার বা হাত মোজা কারণ এগুলো খুব সহজেই হারিয়ে যায়। পাতলা একটা কম্বল সাথে রাখতে পারেন যদি আপনার বেশি ঠাণ্ডা লাগার ধাত হয়। হোটেলে দেওয়া লেপ, কম্বলের পাশাপাশি আপনার নিজস্ব কম্বল আপনাকে বাড়তি উষ্ণতা দেবে। আমি দুরপাল্লার বাসে উঠেই নিজস্ব কম্বলটা পায়ে ঢেকে দেই।

শীতের প্রসাধনী:

শীতের সময়টায় আমাদের ত্বক শুস্ক হয়ে যায়। তাই দরকার অতিরিক্ত যত্নের।শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে সব সময় সাথে রাখুন পেট্রোলিয়াম জেলি, ময়সচারাইজিং লোশন, গ্লিসারিন, তেল বা ক্রিম। সানস্ক্রিন সাথে রাখুন। শীতের রোদ ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র:

আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যে অসুবিধাটায় সবার প্রথমেই পড়তে হয় তা হলো ঠান্ডা-সর্দি-কাশি। যেকোন সময়ই অসুস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে আর একবার অসুস্থ হলে আপনার ভ্রমণ তো মাটি হবেই, আপনার দলের জন্যও এটা একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই কিছু ঔষধ সাথে রাখুন। তবে শীতকাল হোক বা না হোক ভ্রমণে এমনিতেও কিছু ঔষধ বহন করা ভালো। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণ করতে গেলে প্রয়োজনের সময় ঔষধ নাও মিলতে পারে। তাই শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে ঠান্ডা, এসিডিটি, ডায়রিয়া, ব্যথার ঔষধসহ বহন করুন স্যাভলন যা কাটাছেড়া জাতীয় সমস্যায় কাজে দেবে।

বাড়তি জিনিস বহন করা থেকে বিরত থাকুন:

আপনার ব্যাগ শীতের কাপড়ের দরুন ভারী হয়ে যাবে এমনিতেই। তার সাথে অপ্রয়োজনীয় সৌখিন জিনিস নিলে সেটা বহন করতে আপনার অনেক কষ্ট হবে। তাই শীতের পোশাক একটা নিন, কিন্তু উপযুক্তটি নিন। অন্যান্য পোশাক এবং সামগ্রী হিসেব করে নিন। বাড়তি কিছুই নেবেন না। প্রসাধনী যা যা নেবেন ছোট কৌটায় নিন। পুরো বোতলটি নিয়ে যাওয়ার মত ভুল করবেন না।

ট্রেকিং এর ক্ষেত্রে: 

শীতের সময়টায় বৃষ্টি হয় না সাধারণত। তাই পিচ্ছিল পথ পার হওয়া সহজ হয়। বর্ষায় দুর্গম নিষিদ্ধ অনেক পথই খুলে দেওয়া হয় এ সময়। আর এজন্যই শীতের সময় ট্রেকিং এর জন্য পছন্দের অনেক ভ্রমণকারীর। এসময় গরম কম থাকায় ক্লান্তিও কম হয়। আপনিও যদি এই শীতে বেরিয়ে পড়তে চান তাহলে ব্যাগ গোছানোর ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে আরও সাবধানী। পাহাড়ি কোনো এলাকায় ভালো উষ্ণ থাকার জায়গা পাবেন না। তাই শীত প্রতিরোধক কাপড় পর্যাপ্ত নিয়ে নিন।

যাওয়ার আগে খোঁজ নিন:

আপনার ভ্রমণ যেখানেই হোক না কেন একদম সাম্প্রতিক আবহাওয়া সম্পর্কে জেনে নিন। কোনোভাবেই খোঁজ-খবর না নিয়ে বেরিয়ে পরবেন না। সাথে যদি পরিবার থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই আরও সতর্ক হবেন। এসময় প্রচুর ধুলা ওড়ে, আবহাওয়ার শীতলতা এবং উষ্ণতার তারতম্য ঘটে। আর আমাদের দেশের জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া আগে থেকে বোঝা আরও কঠিন হয়ে গেছে। তাই নিজেই সতর্ক হোন।

থাকার জায়গা এবং অন্যান্য:

আপনার ভ্রমণ যদি হয় কোনো জনপ্রিয় জায়গায় তাহলে অবশ্যই থাকার জায়গা আগে থেকে বুকিং দিন। যাওয়ার টিকিটটিও অগ্রিম কেটে ফেলুন। আগে থেকে বুকিং না দিলে হোটেলে খুঁজতে অনেক সময় নষ্ট হবে আপনার। আর শীতের সময় থাকার জায়গাটা ভালো না হলে কষ্ট বাড়বে।

চেকলিস্ট:

উপরের প্রত্যেকটি বিষয় মাথায় রেখে একটি তালিকা তৈরি করুন। তারপর ব্যাগ গোছানো শেষে তালিকা ধরে মিলিয়ে নিন সব নিয়েছেন কিনা। আপনি হয়ত ভাবছেন, মনে থাকবে। কিন্তু মনে থাকা অনেক কিছুই কাজের সময় মনে থাকে না। তাই চেকলিস্ট খুবই দরকারি। উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও আপনার চেকলিস্টে রাখুন দরকারি কাগজপত্রের তালিকা। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, পাসপোর্টের ফটোকপি, ট্রাভেল ইন্সুরেন্সসহ এসকল যাবতীয় কাগজের ফটোকপি সাথে রাখুন।

শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি সব নেওয়া শেষ? এবার তবে বেরিয়ে পড়ুন। উপভোগ করুন শীতের পিঠাপুলি আর প্রকৃতির শুষ্ক কিন্তু ভিন্ন আরেক রূপ।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

ইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটিইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটি
পঞ্চ চূড়া

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

ইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটিইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটি
পঞ্চ চূড়া

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

ইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটিইচ্ছেস্বাধীন মেঘেদের লুটোপুটি
পঞ্চ চূড়া

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!