হুজুগে বাঙালি যেমন ‘পূজো আসছে, পূজো আসছে’, বলে জুন মাস থেকে লাফালাফি করে, তেমনই সব পাহাড়প্রেমীই বোধহয় ট্রেকে যাবার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ‘যাচ্ছি, যাচ্ছি’ একটা মন্ত্র জপে অবচেতন মনে। অদ্ভুত ভাবে, ট্রেক শুরু হবার পর, এই ‘যাচ্ছি’ টা খুব তাড়াতাড়ি পালটে যায় ‘ফিরছি’ তে। লম্বা ট্রেক হলে ২ দিন পর থেকেই আমরা দিন গুনি, ‘আর কটা দিন পর বাড়িতে ফোন করতে পারবো’, পোড়খাওয়া ট্রেকারও দিনান্তে তাঁবুতে বসে মোবাইলে মেয়ের ছবিটা ওয়ালপেপার করেন। টাওয়ার পাওয়া যাবে না জেনেও আমি আরও একটু ফাঁকা জায়গায় গিয়ে আরো একবার ম্যানুয়াল নেটওয়ার্ক সার্চ করি। যদি একবার মাকে পাওয়া যায়!

যাওয়া গুলো যতটা না যাওয়ার জন্য, তার চেয়েও বেশী ফেরার জন্য। ৮-৯ ঘন্টা হেঁটেও তাই খুব একটা ক্লান্ত হইনা, যখন ভাবি কালকেই ফোন করতে পারবো বাড়িতে। প্রিয়জনের গলার আওয়াজের কাছে দুর্গম পাসের হাতছানি কিচ্ছু না। খারাপ আবহাওয়া, বরফ, ঠাণ্ডা… এগুলো আমরা পেরিয়ে যাই শুধুই মনের জোর আর শরীরের জোরে নয়, ফেরার তাগিদেও। ফেরার তাগিদটা হয়তো বাকি ফ্যাক্টর গুলোর থেকেও বড়।

পাহাড় পাহাড় করে যতই কপচাই, কাছের মানুষগুলো ছাড়া আমরা কেউ না, কিচ্ছু না। ‘করতেই হবে’, এমন কোনো জায়গা নেই পৃথিবীতে। কিন্তু যেকোনো জায়গা থেকে, আমাদের সব্বাইকে, ‘ফিরতেই হবে’।

কি মজার ব্যাপার দেখুন, ছবিতে যারা হেঁটে যাচ্ছে আমার আগে, তাদের কাছে, আমাদের সবার কাছে এই ‘বিশালী’, ‘মহাপন্থ’…এসব শব্দ গুলোর তেমন কোনো যৌক্তিকতা আছে কি? আসলে ঐ পদচিহ্ন চলে গেছে আমাদের বাড়ির পথে। যেখানে অপেক্ষা করে আছে আমাদের সবকিছু।

সব যাওয়াই আসলে ফেরার গল্প।

ছবি: বিশালী কল থেকে মহাপন্থ কলের পথে, মান্দানি ভ্যালি ট্রেক, মে ‘১৮।

লিখেছেনঃ ঋদ্ধ দত্ত। ভালবাসেন এডভেঞ্চার, ভালবাসেন পাহাড়। Altitude Adventure Holidays এর প্রতিষ্ঠাতা।