এক ঈদ উল আযহার ছুটিকে সাথে করে বেড়াতে গেলাম হিমালয় কন্যা নেপালে। আমাদের এতো কাছের একটা দেশ, যে দেশে যেতে এমনকি আমাদের দেশ থেকে ভিসা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয় না, সেখানে যাবার জন্য উপযুক্ত সময় সুযোগই পাচ্ছিলাম না কোনভাবেই। সে আক্ষেপের দায় থেকে মুক্তি পেতেই সুযোগ পেয়ে পুরো নেপাল জুড়ে ঘুরে বেড়ালাম এদিক সেদিক। কাঠমান্ডু, পোখারা, চিতওয়ান, নাগরকোট, ভক্তপুরের অলিগলি ঘুরে ঘুরে অনেক পথ হাঁটলাম। কাঠমান্ডুর বিখ্যাত সব মন্দির আর স্তুপাগুলো ঘুরে চলে গেলাম ফেওয়া লেকের ধারের শহর পোখারাতে। একটা বিকেল কেটে গেল অনিন্দ্য সুন্দর সেই লেকে নৌকা চালিয়ে।

পরের দিন খুব ভোরে হোটেলের ছাদে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখলাম মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিল মাছাপুছরের মাথা। মা গো, এটা কি দেখলাম, আসলেই কি কিছু দেখেছি নাকি আমার কল্পনা ছিল বুঝতে পাড়ার আগেই শুধু মেঘ আর মেঘ সেই মেঘের আড়াল সরিয়ে  লাজুক মাছাপুছ্রে আর দেখাই দিল না পোখারায় থাকা পুরোটা সময়। এইখানেই পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে পাখির মত উড়ে বেড়িয়েছি প্যারাগ্লাইডিং করে। শুধু তাই নয় ছোট্ট একটা ফ্লাইট নিয়ে মেঘের উপরে ঘুরে বেড়ানোর পরেও দেখা দিলনা কোন পাহাড়ের সারি। এরপর অল্প স্বল্প ট্রেক করে ২৫০০ মিটার উঁচুতে ধাম্পুসের এক গ্রামে রাত্রিযাপন করেছি মেঘের সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ কাটাবার জন্য। সেখান থেকে ত্রিশূলী নদীতে ১৮ কিলোমিটার এক অনন্য রাফটিং এর অভিজ্ঞতা নিয়ে চলে গেলাম চিতওয়ান। চিতওয়ানে ঘুরে বেড়ালাম সবুজ বনে বনে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভক্তপুরে একটা রাত কাটালাম আর ঘুরে ঘুরে দেখলাম অতীত ঐতিহ্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাগুলোতে ভূমিকম্পের রেখে যাওয়া ক্ষতচিহ্ন। ভক্তপুর ছাড়িয়ে চলে গেলাম নাগরকোট। সেখানে পাহাড়ের উঁচুতে একটা হোটেলে ঘর নিলাম সারা দিন শুয়ে বসে পাহাড় দেখব সেই আশায়।

কিন্তু কিসের কি?? মেঘের মেলায় পাহাড় সব দৃষ্টি সীমানার বাইরেই রয়ে গেল। যেখানে এক রাত থাকার কথা, সারি সারি সাদা বরফে ঢাকা পাহাড় দেখার আশায় সেখানে  আরও একটা রাত কেটে গেল নাগরকোটে। কিন্তু অভিমানী মেঘ কিছুতেই পিছু হটল না, দেখা হলনা হিমালয়ের রূপ। অগত্যা ফেরার পালা। প্লেনে উঠে বসেছি। বরাবরের মতোই চেক ইন করার সময় অনুরোধ করেছি জানালার পাশেই সিট দেবার জন্য। একরাশ অভিমানকে সাথি করে দেশের পথে উড়াল দিল আমার উড়োজাহাজ। ছোপ ছোপ মেঘেদের দলকে পাশ কাটিয়ে যখন নীল আকাশে ভাসছে বিমানটা ঠিক তখনি হঠাৎ বাঁয়ে তাকিয়ে দেখি মেঘের আড়াল সরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সারি সারি পাহাড়। হালকা নীল আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে যেন সাদা পাহাড়গুলো দাঁড়িয়ে আছে দাম্ভিকের মতো। কিছুক্ষণ পরেইআমি চমকে উঠিযেন বিদ্যুৎ এর ছোঁওয়া লেগেছে আমার গায়ে। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি, সারি সারি পাহাড়ের মাঝে একেবারে তিন কোণা একটা চূড়া সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে ছাড়িয়ে। ওটাই কি এভারেস্ট নয়? আমি সাথে সাথে আমার সাথে থাকা ক্যামেরাটা হাতে তুলে নিলাম। সেটায় লাগানো ছিল ১৮২০০ মিমি লেন্স। সর্বোচ্চ জুম করে নিয়ে দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে অপার বিস্ময়ে আমি তাকিয়ে রইলাম সেই পর্বতের দিকে।

হ্যাঁ এটাই এভারেস্ট, অবশ্যই এটা এভারেস্ট। যারা পাহাড় ভালবাসে তাদের কাছে এভারেস্ট এক সাধনার নাম যার দেখা পাওয়া, যাকে ছুঁতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক পাহাড় প্রেমীর সারাজীবনের স্বপ্নই থাকে একটি বার এভারেস্টের চূড়া ছুঁয়ে দেখবার। আমি পাহাড় প্রেমী কিন্তু আমি চূড়া ছুঁয়ে দেখবার স্বপ্ন দেখিনি। আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি এভারেস্টকে দেখব, একটু দূরে থেকেই দেখব, কারণ এর পুরোটা রূপ যে আমি এক সাথে দেখতে চাই। আর আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় ক্ষণে ক্ষণে শিহরিত হতে থাকলাম আমি। অপলক তাকিয়ে থাকলাম এভারেস্টের দিকে। সময় যে বড়ো অল্প, এখন যে পলক ফেললেও আমি হারিয়ে ফেলব অনেক গুলো মুহূর্ত, হারিয়ে ফেলব অনেক কিছু। আমি প্রাণ ভরে দেখতে থাকলাম এই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টকে। এভারেস্টের পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে তার দুই বোন, পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ চূড়া লোৎসে এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ চূড়া মাকালু। এই তিন চূড়ার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে সম্মোহিতের মতো কেটে গেল সময়। অন্তত ৪০০ মাইল বেগে ছুটে চলা প্লেন হিমালয়ের সারিকে পিছনে ফেলে এগোতে থাকল স্বদেশের আকাশ পানে। আর আমি একটু আগে আমার পূরণ হয়ে যাওয়া স্বপ্নের আবেশে সম্মোহিত হয়ে ঘোর লাগা এক অনুভূতি নিয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। ফিরে এসে প্লেন থেকে তোলা পঞ্চচূড়ার ভারেস্ট আর তার দুই পাশে লোৎসে আর মাকালুকে নিয়ে তোলা ছবিটা আমার ফেসবুকের কাভার ফটোতে ঝুলতে থাকল অনেক অনেক দিন।

মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া হলেও আমার প্রিয় চূড়া কারাকরাম রেঞ্জের ভয়ঙ্কর কেটু। কেন প্রিয় যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে বলবো এর ভয়ঙ্কর গঠনের কারণেই এটা আমার প্রিয় চূড়া।  কেটুর মত এতো মৃত্যু খুব কম পাহাড়েই হয়েছে। কেটু যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। কিন্তু এর সৌন্দর্যের এমনই এক অমোঘ আকর্ষণ যার টানে প্রতিবছর কোন না কোন পর্বতারোহী কেটু চূড়া ছুঁয়ে আসার নেশায় ছুটে যায় এই মৃত্যু উপত্যকায়। গত কয়েকবছর ধরেই কেটু সামিট নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে। শীতকালীন সামিট এখনো কেটুতে সম্ভব হয়নি। কেটু নিয়ে এই সব হৈ চৈ ডামাডোলের মধ্যেই আমি নতুন করে প্রেমে পড়লাম কেটুর। ইন্টারনেট থেকে কেটুর একটা ছবি সংগ্রহ করে নিয়ে এভারেস্টের ছবি সরিয়ে পাহাড়ের সারি। নদীর দুপাশের রুক্ষ পাহাড় গুলো মনকে বিষণ্ণ করে তুলছিল ভীষণই।

আমার একটুও ভাল লাগছিলনা লেহতে। আমার মনে হচ্ছিল কবে আমি ফিরব আমার আপন দেশে, আমার লাল সবুজের দেশে। ফেরার দিন খুব ভোরে আমার ফ্লাইট। প্লেন ছুটতে শুরু করলো এক পাশে পাহাড়ের সারি রেখে। অল্পক্ষণেই উড়ে চলে এলো একেবারে স্তোকের মাথায়। সে দারুণ দৃশ্য। নিজে আরোহণ করে পাহাড়ে উঠার আনন্দ এক রকম আবার এই যে দারুণ সারি সারি পাহাড়ের মেলা পুরোটা দেখতে পাওয়া এক সাথে, সেও ভীষণ ভাল লাগার। স্তোকের উপর দিয়ে প্লেন উপরে উঠতে থাকল মেঘের সারি অতিক্রম করে। মেঘের উপরে উঠে আসার পরেই চোখে পড়ল একী? কি ওটা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সব কিছুর সীমানা ছাড়িয়ে??? কেটু? হ্যাঁ কেটুই তো? আমার ভালোলাগার, ভালোবাসার চূড়া, পৃথিবীর সর্বোচ্চ দ্বিতীয় চূড়া, আমার স্বপ্নের চূড়া। যে চূড়া আমি প্রতিদিন, প্রতিবার ফেসবুক খোলার সময় দেখতে পাই, সেই চূড়া এখন আমার চোখের সামনে ওই যে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অইতো! আচ্ছা প্লেনের জানালা কি খোলা যাবে? বের হয়ে যেতে পারব আমি এখন এই আকাশে? খুব যে ছুঁতে ইচ্ছে করছে আমার স্বপ্নের চূড়াটাকে। ওই তো কি দারুণ, সগর্বে, মাথা উঁচু করে, সবাইকে ছাড়িয়ে একাকী দাঁড়িয়ে। আরও কিছুক্ষণ প্রাণ ভরে আমি দেখতে চাই এই অসহনীয় সৌন্দর্য। প্লেনটা এতো দ্রুত ছুটছে কেন? একটু জিরিয়ে নিকনা এখানে, এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সীমানায়। সময়টা কি একটু থমকে যেতে পারেনা? দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যাচ্ছে আমার প্রিয় চূড়া আর আমি চোখে তখন ঝাপসা দেখতে শুরু করেছি। কোত্থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো জল এসে ভিজিয়ে দিয়ে গেল চোখের কোল আর আমার প্রিয় চূড়া চলে গেল আমার দৃষ্টির আড়ালে।

কেটুর দেখা পাওয়ার বেশ কিছু আগের কোনও এক জুন মাসের গরমে প্রথমবারের মত বেড়াতে গিয়েছিলাম কলকাতা। সেই ভীষণ গরমে দুটো দিন কলকাতার গলি, গলি ঘুরে বেড়িয়ে প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত তখন মুহূর্তের সিদ্ধান্তে নিউ জলপাইগুড়ির এক ট্রেনে উঠে বসলাম। সেখানে থেকে জিপে করে পাহাড়ি আঁকা বাঁকা পথ ধরে পৌঁছে গেলাম পাহাড়ি শহর দার্জিলিং। চা বাগান আর পাহাড়ের গায়ে বসানো ঘর বাড়ি দিয়ে বানানো শহর দেখতেই দার্জিলিং আসা। এর বেশি কিছু দার্জিলিং নিয়ে জানতামও না ওই সময়। আসার পথে অনেকখানি জুড়েই দেখলাম চা বাগান। কিন্তু আর নতুন কি। আমার দেশের চা বাগানও একেবারেই এই একই রকম। হ্যাঁ পাহাড়ের গায়ে বসানো ঘরবাড়ি দেখে কিছুটা ব্যতিক্রম লাগল কিন্তু দীর্ঘদিন উন্নত দেশের ঝাঁ চকচকে শহরে থেকে দার্জিলিং কে ভীষণ অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন লাগছিল।

এর মাঝে শুরু হল বৃষ্টি। আমার নিজের ওজনের সমান ওজনের এক ছাতা নিয়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলাম দার্জিলিং এর চারপাশ। নোংরা কাদা লেগে গা ঘিন ঘিন করত আর সেই ঘিন ঘিনে ভাব নিয়েই সারাদিন ঘুরে বেড়াতে হতো এদিক সেদিক। সকালে হোটেল থেকে বের হয়েই একবার হেঁটে আসতাম মল চত্বর। দোকানগুলো সবে তখন খুলব খুলব করছে, আমি কোন একটা রেস্তোরাঁয় কিছু একটা খেয়ে নিয়ে বসে থাকতাম উদাস। বেলা একটু বাড়লে আবারো কোথাও যেতাম ঘুরতে। হয়তো হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে বা তার পাশের চিড়িয়াখানায় বা কখনো ক্যাকটাসের বাগান দেখতে। আবারো বিকেলে গিয়ে বসতাম সেই মল চত্বরে। সেখানে দেখতাম মানুষের মেলা। নানা রঙের, নানান রকম পোশাক পরা নানান ধরণের মানুষ। আর দেখতাম অনেক নিচে ছোট ছোট ঘরবাড়ি আর চোখের সীমানায় মেঘের মেলা। সেই মেলা দেখেই বিকেল কেটে সন্ধ্যা হয়ে যেত। এক দিন কয়লার ইঞ্জিনের ট্রেনে চড়ে চলে গেলাম পাশের শহর ঘুমে। এই ট্রেনও ইতিহাসের সাক্ষী। ঘুম থেকে দার্জিলিং ফিরতে ফিরতে টের পেলাম বৃষ্টির তোড় কমে আসছে, ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে মেঘ।

সেটাই ছিল আমার দার্জিলিঙে শেষ দিন। হোটেলের ঘরে অলস শুয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম মেঘ কেটে গিয়ে পরিষ্কার ঝকঝকে হয়ে উঠল বিকেলটা। শেষ দিন তাই ভাবলাম শেষ বারের মতো ঘুরে আসি মল চত্বরে। অন্য দুদিনের চেয়ে একটু অন্য রকম লাগছিল সেই চত্বর। চত্বরে দাঁড়িয়েই দেখলাম অদূরে বিশাল এক পর্বতমালা একেবারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কদিন কত বার করে এসে হেঁটে গেলাম, মেঘের আড়ালে যে এই জিনিস লুকিয়ে ছিল আমি কল্পনা করিনি। আমার বিস্ময়ে বিস্ফোরিত চেহারা দেখেই হয়তো কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা জানালো এটা কাঞ্চনজঙ্ঘা। বলে কি? এটা কাঞ্চনজঙ্ঘা? গত দু দিন ধরে নিয়মিত এখানে আসছি, বসে থাকছি , অন্য কিছু না পেয়ে দেখেছি মানুষের মেলা আর এখন এই যাবার বেলায় আমাকে অবাক করে দিয়ে মেঘের আড়াল থেকে কি সৌন্দর্য বেরিয়ে এল যার দেখা পেলাম এই শেষ সময়ে এসে। এই কাঞ্চনজঙ্ঘা নিয়ে কতবার শুনেছি অঞ্জনের সেই প্রেমের গান। একটু ভাল করে বাঁচা আর একটু ভাল রোজগারের আশায় এই নীলচে পাহাড়কে ছেড়ে গেলেও কোন কিছুর বিনিময়েই ভুলে থাকা যায়না কাঞ্চনকে। সেই কাঞ্চন এখন আমার চোখের সামনে।

এমন মহিমান্বিত পাহাড় আমার এই প্রথম দেখা আর প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম এই পাহাড়ের। দীর্ঘদিন আমি এক পাহাড়ি শহরে বাস করেছি। আমার ঘরের বারান্দায় দাঁড়ালেই দেখা মিলত উঁচুনিচু পাহাড়ের কিন্তু এই পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন ব্যতিক্রম কিছু আর সেটা হতেই হবে। ৮৫৮৬ মিটার উচ্চতার পৃথিবীর সর্বোচ্চ তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গ এটি। চোখের সামনে এর উপস্থিতির বর্ণনা আসলে ভাষায় দেওয়া সম্ভব না। আর সেই সময়ই মনে পড়ে গেল বহু আগের কথা। ১৯৮৭ সালে স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বেড়াতে গিয়েছি নানাবাড়ি রংপুরে। রংপুরে কয়টা দিন কাটিয়ে আমার ছোট মামার সাথে নীলফামারী চলে গেলাম আমার ছোট খালার বাড়ি বেড়াতে। সেখান থেকে গেলাম পঞ্চগড় আমার আরেক খালার বাড়ি বেড়াতে। আমার আম্মারাও সেখানকে যোগ দিলে বেশ জমে উঠল আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া। ওই অঞ্চলে দারুণ শীত পড়ে তাই লেপের উষ্ণতা ছেড়ে বাইরে খুব একটা বেড়ানো হতো না। খালু চাকুরী করতেন পঞ্চগড় চিনি কলে, সেখানকার আবাসিক এলাকাতেই থাকা আর ঘুরাঘুরি চলল আশে পাশে। পঞ্চগড় থেকে চলে আসার আগের দিন খালা বললেন চলো তোমাদের তেতুলিয়া ঘুরিয়ে আনি।

পরদিন সকালে চলে গেলাম তেতুলিয়া। সেখানে মহানন্দার পাড়ে বেশ দারুণ সময় কাটছিল। আমি হঠাৎ বলে উঠলাম দেখ ওই যে মেঘটা, আমি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি মেঘটা নড়ে না। আমার কথা শুনে খালা হেসে বললেনমা এটাতো মেঘ না, এটা পাহাড়।আমিতো ভীষণ অবাক হলাম খালার কথা শুনে। পাহাড় আবার এমন মেঘের মতো উঁচু হয় নাকি! পাহাড় তো দেখেছি আমি চন্দ্রনাথ বা ফয়েজ লেকে। কই এমনতো ছিলনা। খালা বললেন এটা সত্যিই পাহাড়, এটা হিমালয়। হয়তো পাহাড়ের নামও বলেছিলেন কিন্তু ছোট্ট আমি মনে রাখতে পারিনি। দার্জিলিং এর মল চত্বর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে বিদ্যুৎ চমকের মত মনে পড়ে গেল সেই স্মৃতি, বুঝলাম সেই সময় এই কাঞ্চঙ্গঙ্ঘাই দেখেছিলাম আমি। আবার নতুন করে দেখতে পেয়ে নতুন উপলব্ধিতে তীব্র প্রেমে পড়ে গেলাম আমি, পাহাড়ের। 

এই পাহাড় প্রেমেই আটকে গেলাম আমি। আমার আর কিছু ভাল লাগেনা। ইচ্ছে করে একটা বিরাট সবুজ একটা বন পেরিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে বসে দূরের নীল আকাশ দেখি, আরো সবুজ বা সাদা পাহাড়ের সারি দেখি। পাহাড়ে উঠলে নিজেকে মনে হয় পাখির মত। যেন উড়ে যেত পারব অনেকখানি। ভীষণ এক আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে যা ঠেলে নিয়ে যায় আমাকে সামনের দিনগুলো আরও সুন্দর করে বাঁচার জন্য।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি
শেয়ার করে ভ্রমণশেয়ার করে ভ্রমণ

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি
শেয়ার করে ভ্রমণশেয়ার করে ভ্রমণ

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি
শেয়ার করে ভ্রমণশেয়ার করে ভ্রমণ

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

2 Comments

  1. Md Abdus Sami December 20, 2018 at 1:37 pm - Reply

    অপূর্ব লিখেছেন, পড়তে পড়তে হারিয়ে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য। ইচ্ছা থাকলেও সময় হয়না পাহড়ে যাবার। ভাল থাকবেন আর বেশি বেশি লিখবেন।

    • Aoezora Zinnia December 22, 2018 at 4:42 am - Reply

      ধন্যবাদ, সাথে থাকবেন।

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!