পাহাড়ের বুক চিরে হেঁটে চলছি বেশিক্ষণ নয়, প্রায় ঘণ্টাখানেক। এর মাঝেই সূর্যদেব তার উজ্জলতা বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকখানি আর সেই উজ্জ্বল রোদে পুড়ছে আমার উন্মুক্ত হাত-পা, মনে হচ্ছে মাথার মগজও গলে তরল হয়ে যাচ্ছে। এক ধারে সবুজ বন আর আরেক পাশে মেঘ পাহাড়ের নৈসর্গিক খেলা দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই কিন্ত পায়ের জুতোটা বড্ড বেশি বিরক্ত করছে। প্লাস্টিকের সেই জুতো থেকে পা পিছলে বের হয়ে আসছে একটু পরপরই। পরনের জিন্সটাও যেন ঠেসে চেপে ধরেছে আমাকে। একগাদা জিনিশপত্রে ঠাসা ব্যকপ্যাকটার ওজন চিন্তা করলে ইচ্ছা করছে সেটা ওই দূর পাহাড়ের খাদে ছুড়ে ফেলে সামনে হাঁটা ধরি। ক্লান্তিতে গলা শুকিয়ে আসছে কিন্তু সাথে নেই প্রয়োজনীয় পানি, এদিকে দলের সবার থেকে পিছিয়েও পড়েছি, কারো কাছে যে একটু পানি চাইব সেই উপায় নেই, এই ভাবে কি ট্রেক করা যায়??? কি কষ্ট কি কষ্ট!!! এত কষ্ট করতে কেউ আসে পাহাড়ে??? যা আর কোন দিন যাব না।

সঠিক প্রস্তুতি না নিয়ে, সঠিক তথ্য না জেনে পাহাড়ের পথে পা বাড়ালে কম বেশি কিন্তু এই রকম অবস্থাই হয় সবার। এতে ঘুরতে যাবার কোন আনন্দতো নেই-ই উল্টো বিপদে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা। ট্রেকিং এ ক্লান্তি দূরে রাখার জন্য কিছু টিপস জানা থাকা জরুরী কারণ পথের দূর্গমতার সাথে সাথে ক্লান্তির পেছনে আমাদের ভুলগুলোও দায়ী। তাই আসুন জেনে নেই পাহাড়ে পথ চলতে কিভাবে সতেজ থাকা যাবে।

উপযুক্ত জুতা

ট্রেইলে হাঁটা মানেই পায়ে হাঁটা দীর্ঘ আকা বাঁকা পথ আর সাথে পথের ক্লান্তি। তাই ট্রেইলে নামার আগে পরুন আরামদায়ক, ভালো গ্রিপের, হালকা ওজনের জুতো।আপনার বাজেটের একটা ভালো অঙ্ক রাখুন এই জুতার জন্য কারণ এই জুতার বদৌলতে আপনি থাকবেন নিরাপদ আর আপনার ক্লান্তিকর ট্রেক হয়ে যাবে আনন্দময় অভিযাত্রা।অনেককেই দেখেছি বন্ধুর সাথে হুট করে চলে এসেছে পাহাড়ে, পায়ে দুই ফিতার স্যান্ডেল। উপায় নেই তাই সেটা পরেই শুরু হল ট্রেইলে হাঁটা। খানিক পর স্যান্ডেল ফেলে দিয়ে খালি পায়েই হাঁটতে হয় যা মোটেও নিরাপদ নয়। ঝিরি পথে হাঁটলে বার বার আপনার জুতো ভিজে যাবে তাই  জুতোটা যেন দ্রুত শুকিয়ে যায় সে দিকেও খেয়াল রাখুন। পানিতে ভিজলে ওজন বেড়ে যায় এধরণের কাপড়ের জুতো না পরাই ভালো।

উপযুক্ত ব্যাগ
জুতোর পরে বা জুতোর পাশাপাশি যে জিনিসটায় আমি খরচ করতে বলব সেটা হল ব্যাকপ্যাক। একটা ভালো মানের ব্যাকপ্যাক ট্রেকিং এ আপনাকে রাখবে দারুন স্বচ্ছন্দ। অনেক ব্যাগ আছে যাতে অল্প জিনিস নিলেও ভারি বোধ হয়। এটা হয় ব্যাগের গঠন, বেল্ট সিস্টেমের কারণে। ভালো ভালো ব্র্যান্ডের ব্যাগগুলো মানব দেহের গঠনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এমন ভাবে তৈরি করা যে সেসব ব্যাগ পিঠে নিয়ে অনেক ওজন নিয়ে হাঁটলেও ওজন টের পাওয়া যায় না। যেসব ব্যাগে বুকে এবং কোমরে বন্ধনী থাকে সেসব ব্যাগে অনেক জিনিস বহন করলেও শরীরের উপর চাপ পড়েনা। তাই প্রস্তুতি হিসেব লিস্টের প্রথম দিকেই রাখুন ভালো একটি ব্যাকপ্যাক।

প্রয়োজনীয় পানীয়
পানির অপর নাম জীবন। হাঁটতে হাঁটতে, ঘামতে ঘামতে গলা শুকিয়ে যখন কাঠ তখন সঙ্গে থাকা পানিই হল গলা ভেজানোর ভরসা। কারণ পথে পান করার মত নিরাপদ পানি নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই আপনার সাথে পানির একটি বোতল রাখুন। একটু পর পর পানি পান করুন। কখনোই একবারে অনেকবেশি পানি পান করবেন না,  তাহলে আপনি আরও দুর্বল হয়ে বোধ করবেন, ইচ্ছে করবে একটু বসে জিরোতে, দলের অন্যদের থেকে আপনি পিছিয়ে পড়বেন তাই সামান্য পানি বার বার পান করুন।সঙ্গে থাকা পানিতে চাইলে  যোগ করুন স্যালাইন বা গ্লুকোজ। যে পথে যাচ্ছেন সেই পথে পানির উৎস সম্পর্কে জেনে নিন।

সঠিক প্যাকিং
ট্রেইলে হাঁটা ভীষণ ক্লান্তির। আর এই ক্লান্তি আরও বেড়ে যায় যদি না পিঠের ব্যাকপ্যাকটা ঠিকমত গোছানো হয়। ব্যাগ গোছানোর সময় শুধুমাত্র দরকারি জিনিসগুলো নিন। অযথা অনেক জিনিস নিয়ে ব্যাগ ভারি করে নিজের কষ্ট বাড়াবেন না। ভারী জিনিশগুলো ব্যাগের মাঝামাঝি পিঠের দিকে রাখুন যাতে ওজনটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং বহন করতে কষ্ট না হয়।

উপযুক্ত পোশাক 
পোশাক হওয়া উচিত হালকা ওজনের কারণ ব্যাগ ভারী হলে কিন্তু সেটা আপনাকেই টানতে হবে। সুতি পোশাকে কাপড়ের মধ্য দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে। তাই প্রথম পছন্দ হতে পারে সুতি কাপড়। পানিতে ভিজলে সহজে শুকিয়ে যায় এমন কাপড় ব্যাবহার করা ভালো, তাহলে শরীর ঘেমে পোশাক ভিজে গেলেও খুব একটা অস্বস্তিবোধ হবে না। এমন ডিজাইনের পোশাক বেছে নিন যাতে পথ যেমনই হোক আপনার পোশাক সেখানে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।  রোদ থেকে বাচঁতে ফুল হাতা জামা, ফুল প্যান্ট পরুন, মাথা ঢেকে রাখুন টুপি বা গামছা বা স্কার্ফ দিয়ে।

প্রয়োজনীয় বিরতি 
ধীরে হাঁটুন আর প্রচুর বিরতি নিন। প্রতি আধ ঘন্টার ট্রেকিং এ ২ থেকে ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এতে আপনার চলার গতি সাবলীল থাকবে। যখন বিরতি নেবেন সামান্য কিছু খান। এতে আপনি অনেক সতেজ বোধ করবেন এবং আবারো নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।

খুব সাধারণ এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে দেখবেন অন্য সময়ের তুলনায় ক্লান্তি নেমে এসেছে অর্ধেকের কোঠায়। পাহাড়ি পথে ক্লান্তি কিছুটা তো থাকবেই। তবে একে নিয়ন্ত্রণ করা বা কমিয়ে আনা কিন্তু আপনারই হাতে। ট্রেকিং এর অভিজ্ঞতা ক্লান্তিকর দুঃস্বপ্নের মতো না হয়ে হোক চিরস্মরণীয় এবং আনন্দের।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

জল-পাহাড়ের দিনরাত্রিবান্দরবান-থানছি রুটের বাসের সময়সূচী
ঘরে ফেরা

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

জল-পাহাড়ের দিনরাত্রিবান্দরবান-থানছি রুটের বাসের সময়সূচী
ঘরে ফেরা

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

জল-পাহাড়ের দিনরাত্রিবান্দরবান-থানছি রুটের বাসের সময়সূচী
ঘরে ফেরা

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

2 Comments

  1. kazi enamul hasan February 18, 2019 at 6:04 am - Reply

    nice advice……try to follow it……thanks.

    • Kaalpurush Apu February 18, 2019 at 4:44 pm - Reply

      You are welcome Bro… Stay tuned…!! :)

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!