আজ করবো মাউন্ট কানামো থেকে নীচে নামার গল্প । পাহাড়ে উঠা টা ঐচ্ছিক হলেও কিন্তু নীচে নেমে আসাটা বাধ্যতামূলক। ভারতের স্পিতি ভ্যালিতে অবস্থিত মাউন্ট কানামোর চূড়ায়, ১৯৬০৯ ফুট পর্যন্ত তো উঠলাম। কিন্তু ঠিকঠাকমত নামতেও তো হবে। নীচে নামার মানসিক প্রস্তুতি নিতেই ক্লান্তি আর অবসাদে ছেয়ে গেল মন। সেই সাথে যুক্ত হলো শ্বেত শুভ্র কানামোর চূড়াটা ছেড়ে যাবার কস্ট। মনে হচ্ছিল বাকীটা জীবন এই চূড়াটায় বসে চাঁদ-তারা-সূর্যের খেলা দেখে কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতোনা। কিন্তু তাতো হবার নয় তাই পা বাড়াতেই হল নীচে নামার দিকে। সূর্য ডোবার আগেই নামতে পারলে ভালো তাতে ঠান্ডা কম লাগবে। সূর্য ডুবে গেলে যে কনকনে ঠান্ডা পড়বে সেটা আমাদের মত উষ্ণ তাপমাত্রায় অভ্যস্তদের কস্টই বাড়াবে শুধু। তাই ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলাম।

নামছি চূড়া থেকে।

নামার সময় দলের সবাই যে যার মত করে নামছিলাম। স্ক্রিতে এক জায়গায় পা ফেললে সেই পা পিছলে আরো ২/৩ স্টেপ সামনে চলে যায়। তাল ঠিক রাখা মুশকিল। উঠার সময় উঠেছিলাম জিগজ্যাগ করে, নামার সময় আর অত খেয়াল করে নামা সম্ভব হচ্ছিল না। ইচ্ছা মত নেমে যাচ্ছিলাম। জুতা কিনেছিলাম দুই সাইজ বড় যাতে পাহাড় থেকে নামার সময় পায়ের আংগুল যথেস্ঠ জায়গা পায়। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্রমাগত নীচে নামতে থাকলেও তেমন কস্ট হয়নি।

উঠার সময় যেমন মনে হচ্ছিল উঠছি তো উঠছিই, নামার সময়ও একই অবস্থা, নামছি তো নামছিই। পথ আর শেষ হয় না। শেষ বিকেলের সূর্যের তীব্র রশ্মি মুখে এসে পড়ছিল, বেশি দূর তাকাতে পারছিলাম না। শেষ চড়াই টার কাছে গিয়ে পথ ভুল করলাম। নামতে নামতে একটা সময় খেয়াল করলাম আমি একা! অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গেছি আমি। একটুও ভয় না পেয়ে বা দুশ্চিন্তা না করে মাথা ঠান্ডা রাখলাম। পড়ন্ত সূর্যের অবস্থান বুঝে, আমাদের ক্যাম্পটার পথ বের করার চেস্টা করলাম। সাথে নেই কোন জিপিএস বা দিক নির্দেশনার কোন কিছু। একা হাঁটছি তো হাঁটছিই। পথ আর শেষ হয়না। সূর্য তখন প্রায় অস্ত যাবার পথে। চারপাশের লাল আভা আছড়ে পড়ছিল আশে পাশের পাহাড়গুলোর চূড়ায়। পৃথিবীর অন্য এক রূপ দেখে স্তম্ভিত আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।

মাউন্ট কানামো তখন আমার পিছন দিকে। সেই সময় অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল আমার। মনে হচ্ছিল কানামো আমাকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেছে। ঘাড়ের কাছে শিরশিরে এক অনুভূতি। মনে হচ্ছিল কানামো আমাকে এখান থেকে যেতে দেবেনা, আমাকে মিশিয়ে ফেলবে, বিলীন করে ফেলবে কানামোর বুকে। আমি যত দ্রুত সম্ভব পা চালাচ্ছিলাম কানামোর আড়ালে যাবার জন্য। মনে হচ্ছিল যেন যদি এক ছুটে, এক নিমিষে কানামোর আড়ালে চলে যেতে পারতাম আমি। আমার এই ট্রমা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক তখনই ডানে মোড় নিয়ে কানামোর আড়ালে চলে গেলাম। অস্তমিত সূর্যের লাল আভায় চারদিক তখন রন্জিত। আর সেই আভায় আবছা মত দেখতে পারলাম আমাদের বেস ক্যাম্প!!!

আমাদের বেজক্যাম্প।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

কানামোর কানামাছিকানামোর কানামাছি
মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

কানামোর কানামাছিকানামোর কানামাছি
মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

কানামোর কানামাছিকানামোর কানামাছি
মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়মাউন্ট বাটুরের আগ্নেয় চূড়ায়

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!