হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছুই নেই। তিনি যেমন একাধারে ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, এবং গীতিকার সেই সাথে আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনিই পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমান সমাদৃত। রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এক দুর্গম এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন নুহাশপল্লী। কার্যত এটি নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হলেও লেখক তাঁর মনের মাধুরী মিশিয়ে এটিকে গড়ে তুলেছিলেন কল্পনার স্বর্গরাজ্যে। লেখকের জন্মদিনে ঘুরতে গিয়েছিলাম তাঁর নিজ হাতে গড়া নুহাশপল্লী তে।

নুহাশপল্লী -র রক্ষনাবেক্ষণ এবং নেত্রকোনার কুতুবপুরে হুমায়ুন আহমেদ কতৃক প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠের খরচের প্রায় পুরোটাই আসে মূলত নুহাশপল্লী থেকে অর্জিত টাকায়। এই বিষয়টা মাথায় রেখেই নুহাশপল্লীর প্রবেশ ফী ২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লী তে প্রবেশ ছিল উন্মুক্ত। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো আর প্রিয় লেখকের সমাধিকে অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত করতে সকাল থেকেই ভক্তরা ভিড় করছিল নুহাশপল্লী -র প্রাঙ্গণে। তাদের অনেকেই প্রিয় লেখকের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। কেউবা ঘুরে ঘুরে হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া নুহাশপল্লী পরিদর্শন করেন যার সবখানেই কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিকের সকল স্মৃতি থরে থরে সাজানো।

নুহাশপল্লী -তে ঢোকার সাথে সাথেই মনে হল এ যেন চিরচেনা একটা জায়গা। অনেক নাটক ও সিনেমার শুটিং হবার সুবাদে জায়গাগুলো ছিল সুপরিচিত। মনে হচ্ছিল আমিও যেন নাটকের কোন চরিত্র আর চরিত্রের প্রয়োজনেই গুটিগুটি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি এদিক থেকে সেদিক। প্রবেশপথের কাছেই ছোট্ট, সাজানো সুইমিং পুলটার ধারে বসে মনে হল লেখক আড্ডা দিতে দিতে কতই না সময় কাটিয়েছেন এখানে। সবুজ মাঠের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে চোখে পড়ল নানান আয়োজন। একটি ছাউনির নিচে বিশাল এক দাবার ছক সাজিয়ে দাবা খেলার আয়োজন তো অন্য ছাউনিতে বেঞ্চে শুয়ে কিংবা বসে থাকার ব্যবস্থা।

নুহাশপল্লী -র সবুজ চত্বর। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ। 

পড়ুয়া মেয়ের অপূর্ব এক ভাস্কর্য নুহাশপল্লীতে। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ। 

পুরো নুহাশপল্লী জুড়েই রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য। বই পড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটির ভাস্কর্যটি খুব নজর কাড়া।

লীলাবতী দিঘি। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ। 

হুমায়ুন আহমেদের মেয়ে লীলাবতীর অকাল মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত তিনি লীলাবতীর নামে বিশাল এক দিঘি খনন করান যার ফলকে লেখা রয়েছে ” নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে”। লেখকের নিজস্ব বাংলো ভূত বিলাসের বারান্দা থেকে উপভোগ করা যায় এই দিঘির সৌন্দর্য।

নুহাশপল্লী। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ।

দীঘির ধারে জোছনা কিংবা ভূত বিলাসের আয়োজন, সবুজ মাঠের মাঝে গাছের উপর ছোট্ট ছোট্ট ট্রি-হাউজ, বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, নানান প্রজাতির গাছপালা পরিবেষ্টিত নুহাশপল্লী এক কথায় অসাধারণ। এখানে রয়েছে দুর্লভ ঔষধি , মশ্লা, ফলজ ও বনজ গাছের সংগ্রহ। প্রায় ২৫০ প্রজাতির গাছ আছে এখানে। গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। আছে বৃষ্টি বিলাস ঘর, যার ছাদ টিনের। টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ উপভোগ করার জন্যই বৃষ্টি বিলাসের পরিকল্পনা করা হয়।

হুমায়ুন আহমেদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার ভক্তদের সংগঠন হিমু পরিবহনের উদ্যোগে ৩০ জনের একটি দল ভোরে জেলা শহর থেকে নুহাশপল্লী পর্যন্ত ক্যান্সার সচেতনতামূলক সাইকেল র‌্যালিতে অংশগ্রহণ করে। একই সংগঠনের ১৫ সদস্যের আরেকটি দল প্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্যে ঢাকা থেকে খালি পায়ে হেঁটে নূহাশপল্লীতে যায়। এছাড়াও প্রিয় লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে নুহাশপল্লীর ভাস্কর আসাদ খান তার দ্বিতীয় একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এতে কাঠ দিয়ে তার তৈরি ৬৯টি শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়।

লেখকের সমাধিক্ষেত্র। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ।  

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন অাহমেদ। নুহাশপল্লীর লিচুগাছ তলায় প্রয়াত এই লেখকের মরদেহ দাফন করা হয়।

নুহাশপল্লীতে দর্শনার্থী প্রবেশের নিয়মাবলী। ছবিঃ কালপুরুষ অপূ। 

কীভাবে যাবেন: পুরানো ঢাকা থেকে যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে ঢাকা পরিবহনের বাস যেটা কাপাসিয়া যায় এবং প্রভাতী বনশ্রীর বাস যেটা বরমী যায় সেটাতে উঠতে পারেন। মহাখালী থেকে আসতে চাইলে সম্রাট লাইন , রাজদূত পরিবহন, ডাউন টাউন বাসে উঠতে পারেন। এবার আপনি হোতাপাড়া নামক স্থানে নেমে সিএনজি বা লেগুনা বা যান্ত্রিক রিক্সায় নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে কার বা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যেতে পারেন আপনি। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নুহাশ পল্লী সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন খোলা থাকে। বয়স ১২ বছরের উপরে হলে জনপ্রতি টিকেট লাগবে ২০০ টাকা। কিন্তু নভেম্বর থেকে মার্চ মূলত পিকনিকের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। প্রতিদিন পিকনিকের জন্য ১টি গ্রুপে সর্বোচ্চ ৩০০ জন আসতে পারবে। সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য গুনতে হবে ৬০ হাজার টাকা, অন্যদিন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনে পিকনিকের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা, অন্যদিন গুলোতে ভাড়া হবে ৪০ হাজার টাকা।


পুনশ্চ: ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। অপচনশীল যেকোন আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদের।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

রাজকান্দির হামহাম ঝরনাহামহাম ঝরণা
চড়কপূজাচড়কপূজা

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

রাজকান্দির হামহাম ঝরনাহামহাম ঝরণা
চড়কপূজাচড়কপূজা

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

রাজকান্দির হামহাম ঝরনাহামহাম ঝরণা
চড়কপূজাচড়কপূজা

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!