ভর্তার রাজ্য ‘নিরিবিলি’ -র গল্প লিখব আজ এই মেঘলা দিনটাতে। কারণ এমন একটা দিনে তোতা মিয়ার নিরিবিলির খাবার যে কেউ খাওয়ার জন্য উতলা হবে। তোতা মিয়া। বয়স ৫২। যুবক বয়সে জীবিকার তাগিদে কাজ করেছেন দেশের নানা প্রান্তে। রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে পার করেছেন জীবনের দীর্ঘ সময়। কাজ করতেন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। একদিন তাঁর মনে হল এভাবে আর কত অন্যের জন্য বেগার খাটা। ফিরে এলেন নিজের ঘর গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। সেখানে টোক বাজারে শুরু করলেন নিজের রেস্তোরাঁ।

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন গতানুগতিক হোটেল না করে ব্যতিক্রম কিছু করবেন যার চাহিদা আছে। সাদা ভাতের সঙ্গে ২০ রকম ভর্তার আইটেম দিয়ে আজ থেকে ১৪ বছর আগে প্রাথমিকভাবে শুরু করলেন ভর্তার রাজ্য ‘নিরিবিলি’। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যত সময় গেছে বেড়েছে ভর্তার চাহিদা, ভর্তার পদ বাড়িয়েছেন, আর সেই সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এর নামডাক। হোটেল নিরিবিলির বিশেষত্ব হল এখানে ৮০ রকমের ভর্তা আর ৪০ পদের তরকারি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে আছে অন্তত ২০ রকমের ডেজারট আর হরেক রকম আচার। খাদ্য বিলাসীদের জন্য  হোটেল ‘নিরিবিলি’  হতে পারে এক ভালোলাগার জায়গা।

তোতা মিয়ার এই ভর্তার রাজ্য ‘নিরিবিলি’ তে আছে কালিজিরা ভর্তা, সরিষা ভর্তা, বাদাম ভর্তা, পোস্তা ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা, তিন রকমের রসুন ভর্তা, পেয়াজ ভর্তা, মরিচ ভর্তা। আলুর ভর্তাই পাওয়া যায় ৩ রকম। সেই সঙ্গে বেগুন, গাজর, সিম, টমাটো এই সব ভর্তাতো আছেই। আছে হরেক রকম শুঁটকি ভর্তা, মাছের ভর্তা এবং মাংসের ভর্তা। তোতা মিয়া জানালেন মুরগী আর কবুতর ভর্তাটা বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া শুঁটকি ভর্তা, টাকি মাছ ভর্তা, লইট্যা মাছ ভর্তা অনেক বিক্রি হয়। এইসব ভর্তা ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় হরেক রকম সব্জি, মাছ ও মাংসের তরকারি। নদীর তাজা মাছের পাশাপাশি এখানে পাবেন হাঁস, মুরগী, কবুতর ও কোয়েল ভুনা।

বেশ কয়েক রকম আচার রয়েছে তোতা মিয়ার ভর্তার রাজ্য ‘নিরিবিলি’’ তে । রেস্তোরাঁয় ভাতের সঙ্গে খাবারের পাশাপাশি আপনি চাইলে বাসার জন্য কিনেও আনতে পারেন আচার। এখানে পাবেন বরই, জলপাই, আম, তেঁতুল, চালতার নানান রকম আচার। এছাড়াও পাবেন চাষের মধু আর কালিজিরা তেল।

ভাবতে পারেন ‘নিরিবিলি’ তে খাবারের দাম কেমন? ভর্তার প্যাকেজ প্লেট যা ছয় জনের উপযোগী, দাম ২০০ টাকা। আপনি চাইলে আলাদা করে নিতে পারেন ভর্তা। সেটাও আপনার চাহিদা অনুযায়ী ছোট বাটি বা বড় বাটি হিসাবে পরিবেশন করা হবে। ভর্তা ছোট বাটি ২০ টাকা এবং বড় বাটি ৫০ টাকা। সবজি ছোট প্লেট ২০ টাকা, বড় প্লেট ৫০ টাকা, যেকোন মাছ বা মাংস ৯০ টাকা। পায়েশ মাঝারি এক প্লেট ৫০ টাকা। আচার ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।

হরেক রকমের আচার। ছবি: লেখক

খাবারের মান রক্ষা করার জন্য তোতা মিয়া সচেষ্ট। তিনি আর তাঁর স্ত্রী মিলে প্রতিদিন সব রান্না করেন সঙ্গে থাকে সাহায্যকারী কয়েকজন। তাঁর পরিবারের জন্য আলাদা করে কোন খাবার রান্না হয় না। হরেক রকম ভর্তা ভাজি তৈরির পাশাপাশি স্বাদ বৃদ্ধির চেষ্টা করলে এই রেস্তোরাঁ আরো সুনাম অর্জন করবে বলে আশা করা যায়। শুধু দেশি লোকজনই নয়, বিদেশ থেকেও প্রবাসী বাঙালিরা দেশে আসলে একবার ঘুরে যান তোতামিয়ার রেস্তোরাঁয়।

তোতামিয়ার হোটেল নিরিবিলির সামনেই রয়েছে স্বপনের পানের দোকান। সেখানে আপনি পাবেন ৪০ থেকে ৬০ রকম মশলা দিয়ে বানানো পান। দাম মাত্র ৪০ টাকা। 

শুধুই কি খেতে যাবেন ভর্তার রাজ্য ‘নিরিবিলি’ তে? সময় থাকলে আশেপাশেও ঘুরে আসতে পারেন। টোক বাজারের পাশেই বয়ে চলছে ব্রহ্মপুত্র নদ যেখান থেকে বের হয়েছে নতুন শাখা শীতলক্ষ্যা। নদীতে নৌভ্রমণ করে বা নদী তীরে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়। এছাড়াও সাদি মসজিদ এবং শাহ মাহমুদ মসজিদ নামে দুটো ঐতিহাসিক মসজিদ আছে টোক বাজারের কাছেই।

ঢাকার মহাখালি থেকে অনন্যা, জলসিঁড়ি, বন্যা নামের বাসগুলোতে যেতে পারবেন টোক বাজারে। বাজারে নেমে হাঁটা দূরত্বেই পেয়ে যাবেন হোটেল ‘নিরিবিলি’। পথে দিক নির্দেশনার সাইনবোর্ড পেয়ে যাবেন। খুঁজতে অসুবিধা হলে স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে পথ। ঢাকা থেকে যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। নিজস্ব গাড়িতে গেলে হয়ত সময় কিছুটা কম লাগবে। সকাল আটটা থেকে রাত দুটো পর্যন্ত খোলা থাকে এই হোটেল। তবে রোজার সময় এখানে সেহরি করার সুবিধা পাবেন। এত দূরত্ব অতিক্রম করে শুধু খাওয়ার জন্য না গিয়ে একটু সময় নিয়ে যেতে পারেন যাতে আশে পাশের নদী আর মসজিদগুলোও ঘুরে দেখা যায়। শুভ হোক আপনার ভ্রমণ। 

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

ট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণীর মাংসট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণী
নাফাকুম যাত্রার টুকিটাকিনাফাকুম যাত্রার টুকিটাকি

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

ট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণীর মাংসট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণী
নাফাকুম যাত্রার টুকিটাকিনাফাকুম যাত্রার টুকিটাকি

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

ট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণীর মাংসট্যুরিস্টের খাদ্য বন্য প্রাণী
নাফাকুম যাত্রার টুকিটাকিনাফাকুম যাত্রার টুকিটাকি

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!