“গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ……..আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে, আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে॥” এই গানটির রচয়িতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যে আর সংগীতে ফুটে উঠেছে ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম। ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্যতায় রবীন্দ্রনাথের লেখনী অনন্য। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই উল্লেখ করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত আমার সোনার বাংলা ও জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে গান দুটি যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। শ্রীলংকার জাতীয় সংগীতও রবীন্দ্রনাথের কথা ও সুরে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তে জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে এই বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করা হয়েছে। ১৯৬২ সালের ৮ মে, রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত মহর্ষি ভবনে রবীন্দ্রনাথ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িটিকে বর্তমানে একটি মিউজিয়াম করা হয়েছে যার নাম রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রবেশপথ।
যে অল্প সময় টুকু এই বাড়িতে আমার কেটেছিল, পুরো সময়টাই যেন কোন এক মোহ, কোন এক আবেশে মোহিত হয়ে ছিলাম। হালকা পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম সেই সব ঘরে, সিঁড়ি তে যেখানে ছিল কবি গুরুর নিত্য দিনের চলাফেরা। মন্ত্রমুগ্ধের মত অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম এই মহান কবিকে। রবীন্দ্রনাথের আঁতুড় ঘর থেকে শুরু করে যে ঘরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন সেটিও আজো সাজানো গোছানো আছে। মোট ৪টি ভবনের ১৮টি গ্যালারি জুড়ে রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম। মূল বাড়িটি আয়তাকার। বাড়িটিতে ঢোকার মুখেই বেরসিক গার্ডেরা ক্যামেরা, মোবাইল সব রেখে দিল যার কারণে বাড়িটির ভিতরের ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। সেও এক দিক দিয়ে ভালই হয়েছিল। শুধুই হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছিলাম বাড়িটির প্রতিটি আনাচ, কানাচ যেখানে কবি হেঁটে বেড়াতেন, গান-কবিতা-উপন্যাস লেখায় মগ্ন হতেন। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই কানে ভেসে আসে রবীন্দ্র সংগীতের হালকা সুর। সারা বাড়িতেই বাজছে সেই সুর।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ।
এই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তে দু’টি আর্ট গ্যালারি রয়েছে, যার একটি প্রাচ্য আর একটি পাশ্চাত্যের ধারার। নোবেল পুরস্কারের গ্যালারিটি অত্যন্ত চমকপ্রদ। গীতাঞ্জলি ও নোবেল পুরস্কারের গল্প ছাড়াও নাইটহুড বর্জনের কারণ বর্ণনা করে ইংরেজ সরকারকে লেখা পত্রের কপিটিও আছে এখানে। বাড়িটির লম্বা খোলা করিডোরটি দিয়ে যখন হাঁটছিলাম মনে হচ্ছিল কবি যেন পাশেই আছেন আর আবৃত্তি করছেন “অনন্ত প্রেম” থেকে “আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে। আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি প্রেমিকের মাঝে বিরহবিধুর নয়নসলিলে, মিলনমধুর লাজে—পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।”
কবির হাতের লেখা। ছবিঃ সংগৃহীত।
জাপান ও চীন সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্যালারি দু’টিও মনে রাখার মতো। মূল ভবনের পাশের ভবনটির নাম বিচিত্রা। দোতলায় ভিক্টোরিয়া হল। এখানে আছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ির কিছু ছবি। রবীন্দ্রনাথ যে বোটে করে ঘুরে বেড়াতেন পদ্মায় সেই বোটের একটি চমৎকার প্রতিকৃতিও আছে এখানে যা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি।
নীচে আয়তাকার উঠোনের এক দিকে স্থায়ী মঞ্চ আর এক দিকে পুজোর ঘর, পরবর্তীতে এখানেই হত ব্রাহ্ম সমাজের সভা। মূল বাড়ির বাইরের দিকের একটি ভবনে আছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত একটি গাড়ি যা অতীত ঐতিহ্যের বাস্তব প্রমাণ। প্রতি বছর এই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি তে ঘটা করে পালিত হয় বর্ষবরণ, পঁচিশে বৈশাখ আর বাইশে শ্রাবণ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি সপ্তাহের ৫ দিন ১০টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত (সোম-শুক্র) দর্শকদের জন্যে উন্মুক্ত থাকে। শনিবার খোলা থাকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, আর রবিবার বন্ধ।
রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত গাড়ি।
গুগল ম্যাপে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
