গ্রামে ঘুরি। পৃষ্ঠদেশ দেখিয়ে গ্রামকে পেছনে ফেলে অনেকেই আমরা ডেরা বাঁধি শহরে। নানা অজুহাতে শহরে আসতে থাকি আমরা। কখনো পড়ার অজুহাতে, কখনো চিকিৎসার জন্যে, কখনো বা জীবিকার তাগিদে। তারপর শহর নামের অক্টোপাসটা আস্টেপিস্টে বেঁধে ফেলে আমাদের। গ্রামের দিকে ফিরে তাকাবার আর সময়ই হয় না। যখন সময় হয় ততোদিনে আমরা হয়ে যাই পুরোনো আসবাব। তাই গ্রামে ঘুরি -র প্রয়োজনীয়তা আজ সবচেয়ে বেশি।
এখনো হয়তো অনেকেরই চৈত্রের অলস দুপুরে ঘুঘুর ডাক, ঝিঝি পোকার শব্দ, টিনের চালে শ্রাবণের অঝোর ধারার রিমঝিম গান, বর্ষায় মেঘনা যমুনার অকূল বুক, মজা নদীর যৌবনে কলার মান্দাসে ভাসা, শরতে শিউলি ফুলের নরম ছোয়া, গ্রামের কোন মেঠো পথে চাঁদের কিরণে অবগাহন, জোনাকির সাথে কিছুক্ষণ মিতালী করা, খেজুরের রস, রাত জেগে কবিয়ালের গান শোনা, সং দেখা, বৈশাখের কোন মেলায় চরকিতে উঠা এমনই প্রাণময় গ্রাম দেখতে মনের অন্দরে অনেক ইচ্ছাই উকিঁ মারে।
তাই একটু হাফ ছেড়ে বাচঁবার আশায় ঢু মারি সেন্টমার্টিন, কক্সস বাজার, কুয়াকাটা, জাফলং, সুন্দরবন, হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায়। অতিব্যবহারে এগুলোর অবস্থাও জীর্ণদশা প্রায়। আবার অনেকেই টাকার শ্রাদ্ধ করতে ঘুরে আসি শিলং, নেপাল, সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, আমেরিকাসহ কত কত জায়গায়। অথচ দেখবার সুযোগ হয় না ‘ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু’।
হতে পারে গ্রাম ভিত্তিক পর্যটন। ছোট্ট এই দেশটাতে যদিও ভ্রমণ গন্তব্যের অভাব নেই তারপরেও বিভিন্ন ছুটিতে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোয় দেখা যায় উপচে ভরা ভিড়। তাই প্রয়োজন আরও অন্য অপ্রচলিত ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর দিকে মনোযোগ হওয়া। অনেকেই হয়ত জানেন না খুব ছোট পরিসরে হলেও শুরু হয়েছে গ্রাম ভিত্তিক পর্যটন। কোলাহল এড়িয়ে সবুজ মাঠ, সোঁদা মাটির গন্ধে বিভোর হয়ে কিছুটা সময় ঘুরে আসতে পারেন গ্রাম থেকে। এই গ্রাম ভিত্তিক পর্যটনের আওতায় আমি গিয়েছিলাম যমুনার চরে ৩০০ বিঘাতে ক্যাম্পিং করতে। একটু যত্ন নিলেই এই গ্রামগুলো হতে পারে পর্যটনের এক একটা মডেল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন “ফিরে চল, ফিরে চল, ফিরে চল মাটির টানে, যে মাটি আচঁল পেতে বসে আছে মুখের পানে।” তাই গ্রামভিত্তিক পর্যটনের প্রসার করার জন্য কাজ করছে গ্রামে ঘুরি। গ্রামই হবে আমাদের পর্যটন শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ, মানুষের সহজ সরল জীবন যাপন পদ্ধতি, গাছপালা, বিভিন্ন পাখি, নদী, হাওর, বিল, ঝিল, বিভিন্ন ধরণের লোকজ অনুষ্ঠান, গ্রামীণ পেশা, খেলাধুলা, প্রাচীনবৃক্ষ এইসবই হবে পর্যটকদের মনের খোরাক।
ভাবনার আদান প্রদান ঘটানোর উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে এই গ্রাম পর্যটন। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা, নতুন কোন বিষয়ে সেমিনার, বা গ্রামের স্কুল, কলেজ, পাঠাগারের জন্য বই প্রদান, খেলার সামগ্রী উপহার নানাভাবে শহুরেরা সহজেই বন্ধুত্ব করতে পারে গ্রামের মানুষের সাথে। পাখি চেনানো, গাছ চেনানো, তারা চেনানো এরকম নানা কার্যক্রম চলতে পারে।
একই ভাবে পর্যটকরাও পারে গ্রামের নির্মল পরিবেশ, বয়স্ক কোন গাছের নীচে বসে শুনবে রাখালি বাশিঁর সুর, শুনবে রাত জেগে কবিয়ালের গান , বিভিন্ন পিঠে পায়েসের স্বাদ, চাঁদের আলোয় অবগাহন, জোনাকির সাথে মিতালী করা নানাভাবে উপভোগ্য হবে তার সময়। মা-খালাদের হাতের হস্তশিল্প অনেক আদরণীয় শহরের নাগরিকদের কাছে। মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প, তাঁতশিল্প এগুলো আবারো প্রাণ ফিরে পাবে গ্রাম ভিত্তিক পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে।পর্যটকদের থাকা খাওয়া বাবদ অর্থের একটা প্রবাহ চলবে গ্রামের দিকে। এতে অর্থনৈতিক একটা স্বাচ্ছন্দ যেমন আসবে তেমনি প্রাণময় হয়ে উঠবে আমাদের গ্রাম।
কিছু ভৌতকাঠামো উন্নয়ন আর সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলে দেখা যাবে আমাদের পর্যটনের প্রাণ ভোমরাটাই হবে গ্রাম। দেখা যাবে এতোদিন শুধু গ্রামের অর্থ শহরে এসেছে এবার শহরের কিছু অর্থ গ্রামের আসবে। পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হবে আমাদের গ্রাম। গ্রামের বাজারে বেড়ে যাবে বেচা-বিক্রির হার।
পযর্টকদেরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। গ্রামীণ, বিশ্বাস আচার প্রথা, এসবের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। আমরা শহরে যে পোশাক পরে ঘুরে বেড়াই সেটা হয়তো গ্রামের মানুষের চোখে দৃষ্টিকটু লাগতে পারে। এমন কোন খাবার বা পানীয় না খাওয়াই উচিৎ যা গ্রামের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে। কিছু বিলাস বস্তু যা অপ্রয়োজনীয় তা পরিহার করাই শ্রেয়। অন্যথায় সে সব গ্রামের মানুষও অনুকরণ করতে পারে। পর্যটকদের এমন কিছু ফেলে আসা যাবে না যা পরিবেশের জন্য হুমকি হতে পারে।
একটু সচেতন হলেই অনেক কিছু করাই সম্ভব। একটু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করলেই সৃষ্টি হতে পারে অনেক সুন্দর কিছু। তাই গ্রামে ঘুরি আহ্বান জানাচ্ছে গ্রামকে চিনতে, গ্রামকে বুঝতে, গ্রামের অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে গ্রামে ঘুরতে।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
Get Social