চলেছি সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায়। দাঁড়িয়ে আছি তূষারস্নাত গোরখশেপে। সময় প্রায় দুপুর ২টো। তুষারপাত আপাতত বন্ধ হয়েছে। সূর্যের আলো অবশিষ্ট কিছুটা তখনও। আজকে আর বেসক্যাম্প যাওয়া হচ্ছে না তাই নিশ্চিন্তে উপভোগ করছি হাই অল্টিটিউড ফুটবল খেলা। পাশেই সেই বিখ্যাত কালাপাত্থরের রাস্তা চলে গিয়েছে ঠিক যেন পুমোরীর পায়ের নীচে।কাছেই সেই বিখ্যাত সাইনবোর্ড “Evarest Base Camp In This Way”। প্রতীকী ছবি তুলতে দাঁড়ালাম তার পাশে। এতক্ষণ সবকিছু ঠিকই ছিলো। বাধ সাধল আমার ট্রেকার সঙগীর গোয়ার্তুমিতে।
মালয়শিয়ার অভিযাত্রীদের কাছে শোনা সময় হিসেবে গোরখশেপ থেকে বেসক্যাম্প পৌঁছতে সময় লাগে দুঘণ্টা আর ফিরতে একঘন্টা। যেটা একেবারেই ভুল বলেছিলেন তারা এক বিশেষ কারণে, যেটা নিয়ে পরে বিস্তারিতভাবে জানাচ্ছি। তো সেই সময়ের হিসেব করে আমার সঙগী গোয়ার্তুমি করলেন যে এখনই বেসক্যাম্পের উদ্দ্যেশে বের হবেন এবং নিশ্চিন্তেই নাকি আমরা ৬টার মধ্যেই গোরখশেপ ফিরে আসবো। তাহলে তার হিসেবে পরের দিন সকাল সকাল কালাপাত্থর করে ফিরতি পথ ধরতে পারবো।
আমি উনাকে অনেক নিরস্ত করার চেষ্টা করলাম এই বলে যে শেষ লক্ষ্যে ভোর ভোরেই বের হতে হয় বিকেলে নয়। কারণ বিকেলে এই উচ্চতায় হিমালয়ের আবহাওয়া মুহুর্তেই খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও ছবি ভালো উঠবেনা, বেশীক্ষণ সময় কাটাতে পারবো না, সন্ধ্যা হয়ে গেলে গ্লেসিয়ার বরাবর ট্রেক করে ফিরতে যথেষ্ট বিপদ ও অসুবিধা হতে পারে ইত্যাদি অনেক নেতিবাচক কারণ জানালাম। কিন্তু সে তার গোয়ার্তুমিতে স্থির। গর্ব করে বলতে লাগলেন “বরাসু পাস, অডেন কল করে মারা গেলাম না আর তোর হিসেবে এই গোরখশেপ থেকে বেসক্যাম্প এইটুকুতে মারা পরবো।” আমি সেই বিখ্যাত উক্তি ” Mountain is always there” লাইনটা স্মরণ করিয়ে বারবার বোঝালাম যে পাহাড় কখনও কিন্তু অতিরিক্ত উদ্ধতা মাফ করে না। এইটুকু পথ কেন, ১০০ মিটারেও পাহাড়ে একাধিক তুচ্ছ ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই জীবনহানি হয়েছে এই উদাহারণও প্রচুর। কিন্তু আমার কোন কথাই শোনা হল না উল্টো আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল হতে হল এটা শুনে যে “তুই চোলাপাস পার হয়ে গেলি আর এইটুকু লাস্ট ট্রেক করতে ন্যাকামো করছিস।” বুঝলাম যে অনেকেই থাকে যারা গাইড পোর্টারদের দায়িত্বশীল কাঁধের ভরসায় চার-পাঁচটা ট্রেক করেই নিজেকে পাহাড়ের সব জেনে ফেলা বিশেষজ্ঞ দলের মধ্যে রাখেন তিনিও তাদের মধ্যে একজন।
চোলা আমাকে পার হতেই হয়েছিলো এই পথে আসতে তাই সেটা ছিলো প্রয়োজন। কিন্তু এখানে আমার হাতে কালকেও যাওয়ার অপশনটাও নিশ্চিত খোলা আছে। পাহাড়ের প্রাকৃতিক কারণের পর যেই কারণটায় সবচেয়ে বেশী ক্যাজুয়ালটি হয়ে থাকে সেটা হল “Subjective Hazards” অর্থাৎ নিজের থেকেই আমরা যে বিপদের আহ্বায়ক হয়ে উঠি। কিন্তু ওনাকে নিরস্ত্র করা গেলো না। অগত্যা রাগ করেই জেদের বশে রাজী হলাম। বেরিয়ে পড়লাম কিছু শুকনো খাবার ও অবশিষ্ট অর্ধেক বোতল জল নিয়ে, পথে আপদে বিপদে লাগতে পারে এই ভেবে।
আবহাওয়া তখনও অনুকূল। সকালে যারা বেসক্যাম্পের পথে বের হয়ে তুষারপাতে বেসক্যাম্পেই আটকে পড়েছিলো তারা বেশীরভাগই তখন গোরখশেপের পথে ফিরছিলো। শুধু উদ্ধতভাবে উর্দ্ধমূখী আমরা দুজন। মাঝে মাঝে দেখা হাতে গোনা দু-একজন পোর্টার যারা বেসক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলো। কিন্তু তারা আজকে কেউই আর আজ গোরখশেপে ফিরবে না। তাদের কাছেই জানতে পারলাম নিজের টেন্ট আর স্লিপিংব্যাগ ছাড়া রাত কাটানোরও কোন উপায়ও নেই বেসক্যাম্পে। তাই গোরখশেপে আমাদের আজকেই আবার ফিরে আসতেই হবে। তাই খম্বু গ্লেসিয়ারের বরাবর মোটামুটি সহজ এই পথে তখন ট্রেক ঠিক নয় রীতিমত ম্যারাথনের গতিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে দৌড়াচ্ছিলাম।
প্রকৃতির অসীম শক্তির সামনে আমাদের অস্তিত্ব বরাবরই কালবৈশাখী ঝড়ের মাঝে উড়ে যাওয়া খড়কুটোর মতই তুচ্ছ। ঘন্টাখানেক পরেই আবহাওয়ার নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হতে লাগল। শুরু হল ভয়ানক তুষারপাত। জ্যাকেট পুরো ভিজে শেষ। বেসক্যাম্পও অদৃশ্য তুষারপাতের কারণে। কিন্তু “ন্যাকামো” করছি শব্দটা মাথায় বারংবার হ্যামারিং করায় জেদ নিয়েই চলছি যা হবে হোক আজকেই পৌঁছবো। তুষারপাত ক্রমাগত বেড়েই চলছে এদিকে পথ প্রায় জনমানব শূন্য। এতক্ষণে এবার আমার ট্রেকসঙগীর বাস্তবের মাটিতে (বরফে) পা ঠেকলো যেন। আমার দিকে তাকিয়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরে তার উক্তি ” যা বরফ পড়ছে আর কি এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে?”
কিন্তু আমি জেদের বসে এগোতেই থাকলাম। অগত্যা উনিও পেট ব্যাথার কারণ দেখিয়ে আমাকে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকলেন কিন্তু আমার কর্ণপাত করার কোন ইচ্ছাই ছিলো না তখন। ফটিকজল পাখির কন্ঠে একফোঁটা বৃষ্টির জল ছুটে আসার মত রাস্তায় হঠাৎ এক যুগলকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে পৌঁছালাম তাদের কাছে। অস্ট্রেলিয়ান যুগল। আমাকে দেখতে পেয়েই তাদের উক্তি “Do you think we are crazy because we are continue our trek towards basecamp in this weather.” শুনে খুশি হলাম যাক আরও দুজন সঙগী পাওয়া গেলো। প্রত্যুতরে জানালাম “We too.” আমরাও পাগল তাই আমরাও যাচ্ছি। কিন্তু শেষরক্ষা আর হলনা, আবহাওয়ার এই বিরূপতা দেখে তারাও নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের রেস্ট অফ জার্নির জন্য বেস্ট অফ লাক জানিয়ে।
আমরা কিন্তু তখনও উর্দ্ধগামী। রাস্তা যেটা অনুমান করা হল, কমপক্ষে আরও দেড়ঘন্টা তো লাগবেই। এছাড়াও পেট ব্যাথার কারণে অবশেষে আমার সঙগী এবার ফিরবেই বলে মনস্থির করে ফেললেন। এছাড়াও বুঝলাম যে, যেভাবে তুষারপাত হচ্ছে এক্ষেত্রে আমাদের তুষারসমাধি তৈরী হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অগত্যা জেদ ছেড়ে ফিরতি রাস্তার পথ ধরতেই হল। কাকভেজা হয়ে যাওয়া-আসা বাবদ প্রায় ৩ ঘন্টা নষ্ট করে অসফল হয়ে ফিরলাম গোরখশেপের লজে। অস্তগামী সূর্যের শেষ আলোয় হাতে কফির কাপ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর বিকেলে ট্রেকের সিদ্ধান্তটা যে ভুল ছিলো তা অপরপক্ষ অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও অবশেষে নিজের ভুল হিসেবে স্বীকার করলেন। এছাড়াও ফায়ার প্লেসের বদ্যানতায় জ্যাকেট, প্যান্ট, মোজা সব শুকিয়েও নেওয়াও সম্ভব হল।
রাতে খাওয়ার টেবিলে আবার ওই মালয়শিয়ানের সাথে দেখা। এবার আসি তাদের গল্পে। প্রকৃতপক্ষে তারা বেসক্যাম্পে পৌঁছায়নি। তাই তাদের দেওয়া সময়ের হিসাবটাও একেবারে গোলমেলে ছিলো। তাই রাতে যখন তাদের কাছে বেসক্যাম্পের ছবি দেখতে চাওয়া হল তখন তারা “একে অন্যের মোবাইলে আছে” এই অজুহাতে আমাদের পাশ কাটানোর চেষ্টা করতে লাগলেন। যাই হোক এরপর যেটার সমস্যা হল এখানে পানীয় জল কিনতেই হবে, সেটাও ৪০০ এনসি দিয়ে। কিন্তু জল কিনে খাবো একেবারেই ইচ্ছে ছিলো না আমার। অগত্যা রাতে বা পরের দিন কি হবে তা পরে দেখা যাবে এই ভেবে এগকারী-ভাত ও অবশিষ্ট অর্ধেক বোতল জল দিয়েই নৈশভোজ করা হল। ঘরে ঢুকেই মাথায় পদার্থবিদ্যার বুদ্ধি হাজির। আমাদের তো পোর্টেবল স্টোভ আর ফুয়েল ট্যাবলেট আছেই। অগত্যা চুপিসারে একমগ স্নোআইস নিয়ে আসা হল রুমে। ৫১০০ মিটার উচ্চতায় অক্সিজেনের অভাবে প্রায় পুরো দেশলাই বাক্স শেষ করে অবশেষে ফুয়েল ট্যাবলেট জ্বালিয়ে স্টোভের আগুনে একটা বাটিতে বরফ গলাতে লেগে পড়লাম।কিন্তু হায় পদার্থবিদ্যা সেই বেসিক থিয়োরি “একই পরিমাণ বরফের আয়তন সমপরিমাণ জলের তুলনায় অনেক বেশী।” এত কষ্টের পর জল পাওয়া গেলো কয়েক চামচ মাত্র। অগত্যা তাই বোতলে ভরে রাখলাম। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না, পরের দিন ভোর ৪টায় লজের মালিককে ডেকে অগত্যা এক বোতল জল কিনতেই হল।
পানীয়জলের খোঁজের চেষ্টায়।
ভোর ৪টায় আবার ট্রেক শুরু পুরনায় বেসক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। আমরাই আজ সর্বপ্রথম এই পথে। তবে যেই ট্রেকাররা কালাপাত্থর যাবেন তাদের হেডটর্চের আলো ধীরে ধীরে ওঠে যাচ্ছিল ওই পথে। তাপমাত্রা মাইনাসের অনেক নীচে হলেও একেবারে স্থিতিশীল। আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ ও নক্ষত্ররা। সেই পায়ের ছাপ বরাবার এগিয়ে যাচ্ছি তবে আগের দিনের থেকে একটু ভিন্ন একেবারে খম্বু গ্লেসিয়ার বরাবর নীচের পথটি ধরে। সহজ পথ তবে কিছুটা উঁচুনিচু। পিছন ফিরতেই অবাক। ভোরের আলোতে ধীরে ধীরে উদ্ভাসিত চোলাৎসে আর বাঁপাশ থেকে সেই পুমোরী। কিন্তু সঙগীর প্রশ্নে আবার কনফিউশান “রাস্তা সঠিক আছে তো।” কিন্তু আমি কনফিডেন্ট যে আমরা সঠিক পথেই আছি কারণ এই রাস্তায় অসংখ্য পায়ের ছাপ সুস্পষ্ট। কিন্তু চিন্তা বাড়ল তাহলে এতক্ষণেও বেসক্যাম্প দেখা যাচ্ছে না কেন! তাহলে কি আবার ভুল রাস্তা! বেসক্যাম্প কি পুমোরীর অন্যপাশটায়। কারণ সামনেই এই পথটা যেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার মাথায় দাঁড়িয়ে পুমোরী ও লিংট্রেন।
ক্ষুদ্র কিন্তু বিখ্যাত সেই পথচিহ্নের সাইনবোর্ড।
এখানে একটা শিক্ষা নেওয়ার আছে। নিজের ওপর কনফিডেন্ট থাকলে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকাই উচিৎ। কিন্তু এখানে আমিও কনফিউশনে দ্বিধাগ্রস্ত। তাই আরেকটা চড়াই চড়তে গিয়েও পথ ভুল হয়েছে ভেবে আবার পিছিয়ে আসা শুরু করলাম। এসব হচ্ছেটা কি! দুদিনে দুবার অসফল। ফিরতি পথে ভাবতে বাধ্য হলাম যে আমরা কি এতটাই অধম যে পর্বতরাজ তার নিজেস্ব অঙগনের কাছে ঘেষতেই দিচ্ছেন না আমাদের। যথেষ্ট বিরক্তি নিয়েই ফিরছিলাম। কিন্তু এবার আশার আলো দেখা গেলো। ওই তো কয়েকজন এই পথেই আসছে। গাইড সহ একটা কোরিয়ান দল। গাইডকে বিস্তারিতভাবে বলতেই তিনি বলেন যে আমরা একেবারেই ঠিকপথেই হাঁটছিলাম এতক্ষণ। এছাড়াও তিনি একটু অবাকও হলেন যে সুস্পষ্ট পদচিহ্ন যেখানে সমগ্র রাস্তাটাতেই আছে সেখানে আমরা কিভাবে ভাবলাম যে রাস্তা ভুল করেছি।
নুপৎসেও হাজির তার রাজকীয়তায়।
যাইহোক দ্রুত হেঁটে সেই চড়াইটাতেই পৌঁছতেই বেসক্যাম্প নজরে এসে পড়ল। নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজেকেই থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে হল। প্রকৃতপক্ষে এপ্রিলের শুরুতে এখনও পৃথিবীর ক্লাইম্বারেরা বেসক্যাম্পে পৌছায়নি। আইসফল ডক্টর অর্থাৎ শেরপাদের টেন্টগুলো পড়েছে শুধুমাত্র। সেক্ষেত্রে এভারেস্টের বেসক্যাম্প বলতে যে এক রাজকীয় আধুনিক সকল সুযোগসুবিধাযুক্ত বিস্তৃত কর্মযজ্ঞের চিত্র ফুটে ওঠে সেটা এখনও শুরু হয়নি এখানে। কিন্তু এই অলীক চিন্তাতেই আজ সকালে একেবারে বেসের কাছে পৌঁছেও আমরা প্রায় ফিরে আসছিলাম।
উচ্চতায় ক্ষুদ্র কিন্তু সৌন্দর্যতায় কিছু কম নয় -লিংট্রেন।
যাইহোক অবশেষে এসেই পড়ল মহেন্দ্রক্ষণ। পুমোরী, লিংট্রেন, চানৎসে এবং নুপৎের একেবারে মাথায় আশিস হয়ে দেখা দিলো সেই এভারেস্ট। কিন্তু সামান্যই। খম্বু আইসফল বরাবর সেই বিখ্যাত এভারেস্ট ক্যাম্প ওয়ানের রাস্তা। রীতিমত হলিউড চলচিত্রের নামী গ্রাফিক্স শিল্পীর 3d ক্যানভাস ছবি যেন। মূল্যবান জিনিসপত্র মানুষ যেভাবে লুকিয়ে গুছিয়ে রাখে হিমালয়ও যেন সেই একই রীতি মেনে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছে তার উচ্চতম অহংকারকে। যাইহোক অবশেষে আড়াআড়িভাবে গ্লেসিয়ারের কিছুটা অংশ পার করে পৌঁছালাম অভিষ্ট লক্ষ্যে। প্রথমেই প্রতিবারের মত প্রথমকাজ সেই জাতীয় পতাকা নিয়ে লক্ষ্যে দাঁড়ানো। ট্রেকের পথে হাজার কষ্টের পর জাতীয় পতাকাকে হাতে নিয়ে মাতৃভূমিকে রিপ্রেজেন্ট করার সময় যে গর্ব অনুভব হয় সেটার মূল্য ট্রেকাররা কোনদিনই সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারবে না।
সেই এভারেস্ট যার জন্য এতদুর ছুটে আসা।
সবার প্রথমে পৌঁছানোর সুবিধা হল ট্রেকারদের ভিড় তখনও শুরু হয়নি। ইচ্ছেমত ছবি তুলে হাজির হলাম একেবারে আইসফল ডক্টরদের আঙিগনায়। সত্যি এভারেস্ট বহুবার ক্লাইম্ব করা এই মানুষগুলোর এতটুকুও অহংকার নেই। নিজেরাই আমার দিকে ব্ল্যাক টি এগিয়ে দিয়ে নিয়ে গেলেন তাদের আড্ডার ডাইনিং টেবিলে। এরপর খম্বু আইসফলের কাছাকাছি যেতেই একজন শেরপার টেন্ট থেকে ভেসে এল পরিচিত একটা হিন্দি গান “কিয়া দিল নে কাহা, কিয়া তুমনে শোনা।” এভারেস্ট বেসক্যাম্প, সেখানে বলিউডের হিন্দীগান চলছে, এটাও কম গর্বের নয় কি!
খম্বু আইসফল।
এরপর ফেরার পথ ধরার আগের শেষ কাজ হিসেবে ভগবান বৌদ্ধের প্রেয়ারিং ফ্ল্যাগ লাগানো হল সেই প্রতীকি পাথরটায়। ফিরছিলাম একেবারে ২০০ শতাংশ সন্তুষ্টি নিয়ে। ফিরতি পথে দেখা এক সারমেয়র সাথে। পাহাড়ে চিরকাল এরা সেই সত্যরাজ যুধিষ্ঠিরের যুগ থেকেই মানুষের সাথে সমানতালেই পথ চলার সহযোগী হয়ে ওঠেছে। ফিরতি পথেই দেখা পুর্বা শেরপার সাথে। সফলতার কামনা জানিয়ে জড়িয়ে ধরে ভাবুক হয়ে বিশাল মনের মানুষটিকে বিদায় জানালাম। বেলা ১০ টায় পৌঁছালাম গোরখশেপ। বিল মিটিয়ে তিরিশ মিনিট পরেই ফেরার রাস্তা ধরলাম। কিন্তু প্রায় লবুচের কাছাকাছি পৌঁছে হিসেব করে দেখলাম লজের মালিক জলের বোতলের ৪০০ টাকা নিতে ভুলেই গেছেন। যাইহোক তখন চাইলেও আমরা আবার ফিরে গিয়ে সেটা মেটাতেও পারতাম না। হয়তো ইশ্বর শেষবেলায় স্বইচ্ছাতেই আমাদের মত গরীবদের জন্য বিনামূল্যে জলের ব্যবস্থা করে দিলেন।
চলবে…
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (১ম পর্ব)
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (২য় পর্ব)
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (৩য় পর্ব)
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (৪র্থ পর্ব)
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (৫ম পর্ব)
• সাগরমাথার নিজস্ব আঙিনায় (৬ষ্ট পর্ব)
লিখেছেন তাপস কুমার রায়। স্বাস্থ্যদপ্তরে এবং পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী নিয়ে একটি সেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন। নেশা- ক্রিকেট, ট্রেকিং, ইতিহাস ও একটু আলাদা টাইপ অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজ আর সাপ।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
