১৯৬১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মানুষ তৈরি করল এক বর্বর জঘন্য দৃষ্ঠান্ত। মানুষ সেদিন ‘মেরী’ নামের এক এশীয় হাতির মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে মানব সভ্যতায় এক জঘন্য ইতিহাসের উদাহরণ সৃষ্টি করে। মৃত্যুদণ্ড প্রদানের নামে প্রকাশ্যে জনসন্মুখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে এই নিরীহ প্রাণীটিকে।
ট্রেনের বিশাল এক ক্রেনের হুকে মেরীকে ঝুলানো হয়। প্রথমবার ৫ টনের বিশাল এই হাতিটির ভারে ক্রেনের শিকল ছিড়ে যায়। অনেক উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয় মেরি। শিকলে গলা কেটে রক্ত পড়তে থাকে, পিঠের হাড় ভেঙ্গে যায়, শরীর থেতলে যায়। এমন মারাত্মক আহত হলেও হত্যার জন্য তাকে আবারো ঝুলানো হয়। দ্বিতীয় বারের চেষ্ঠায় মেরী মারা যায়। গলায় ফাঁস লেগে চির বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। জীবন দিয়ে মেরী রচনা করে যায় মানুষের এক বর্বরতাপূর্ণ ইতিহাস।
মৃত্যুদণ্ডের কারণ: ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার টেনেসি অঙ্গরাজ্যের আরউইন শহরের। মেরী ছিল সার্কাসের একটি মেয়ে হাতি। এশীয় প্রজাতির এই হাতিটি সার্কাসে খুবই চমকপ্রদ ও বুদ্ধিমতী ছিল। সার্কাস মালিক এই হাতির পুরনো মাহুতকে অপসারণ করে রেড অলড্রিজ নামের এক হোটেল কর্মচারীকে নতুন মাহুত হিসেবে নিয়োগ করে। অনভিজ্ঞ রেড ছিল এই কাজে একেবারেই অদক্ষ। পরদিন খেলা দেখাতে গিয়ে নতুন মাহুত রেড অলড্রিজ হাতি মেরীকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছিল। মেরীকে বশ করতে হাতের দণ্ড দিয়ে মেরীকে বার বার আঘাত করছিল সে। এই বিরক্তিকর অত্যাচর সহ্য করতে না পেরে এক সময় মেজাজ বিগড়ে যায় মেরীর এবং প্রচন্ড রাগে মেরী তার নতুন মাহুত রেড অলড্রিজকে পিঠ থেকে ফেলে দেয় ও পিষে মেরে ফেলে।
হঠাৎ এই আকস্মিক ঘটনায় সকল দর্শক ভয় পেয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে যায় সার্কাস দল। মেরীকে দিয়ে খেলা দেখানো বন্ধ করে দেয়া হলেও বিক্ষুব্দ জনতা মানুষ মারার অপরাধে মেরীকে ফাঁসিতে চড়ানোর দাবী তোলে। এমনকি একজন স্থানীয় কর্মকার মেরীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে ব্যর্থ হয়। যদিও পরবর্তিতে এই ঘটনা তদন্তে দেখা যায় নতুন মাহুত রেড অলড্রিজের অনভিজ্ঞতা ও বোকামির কারণে সে হাতিটিকে অনেক বেশী বিরক্ত করেছিল। যার ফলে হাতিটি রেগে গিয়ে তাকে হত্যা করে। কিন্তু আশেপাশের স্থানীয় নেতারা মানুষ হত্যার বদলা হিসেবে মেরীকে ফাঁসি না দিলে সার্কাস দলকে খেলা দেখানোর অনুমতি দিবে না বলে ঘোষণা করে। দ্রুতই ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গিয়ে সার্কাস দলের লোকসানের অবস্থা তৈরি হয়। অবশেষ সার্কাস মালিক জনগণকে শান্ত করতে মেরীকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।
মেরীকে হত্যার বিরুদ্ধেও ছিল কিছু মানুষ। মেরীকে হত্যার পর এর সমালোচনাও হয়। অনেকে লেখে নিবন্ধ, কেউ কবিতা, কেউ আঁকে ছবি। এসব নিবন্ধ, কবিতা ও ছবি সেই ঘটনার সাক্ষী হয়ে এখনো বেঁচে আছে মানুষের মাঝে।
মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। তাই সে বশে আনতে পেরেছে পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণী। কিন্তু এই বুদ্ধিমান মানুষ যখন কোন নিরীহ প্রাণীকে হত্যার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায় তখন মানব সভ্যতা কি সেটা নিয়ে আসলেই প্রশ্ন জাগে।
প্রাণী হত্যাকাণ্ড আজও থেমে নেই। প্রতিদিন মানুষ বুঝে শুনে হত্যা করে চলছে একের পর এক প্রাণী। আমাদের আশেপাশেই চলছে এসব ঘটনা। আর এদের হত্যা থামাতে পারে শুধু মানুষই, অন্য কোন প্রাণী নয়। আর এজন্য এগিয়ে আসতে হবে সকলকে।
লেখা: মাইন রানা
প্রভাষক: নরসিংদি সরকারি কলেজ, প্রাণীবিদ্যা বিভাগ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: প্রাণীজগতের অজানা রহস্য
Follow us on
Subscribe and stay up to date.

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
