গন্তব্য যখন তিনাপের বাড়ি। বম ভাষায় সাইতার অর্থ ঝর্ণা। আর ঝর্ণা মানেই প্রকৃতি, ঝর্ণা মানেই প্রাণচাঞ্চল্য, ঝর্ণা মানেই আনন্দে অবগাহন। তিনাপ সাইতার বাংলাদেশের একটি অন্যতম সুন্দর ঝর্ণা। আর কারো গন্তব্য যখন তিনাপের বাড়ি -র পানে হয়, তাহলে তাকে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার গহিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে, পাহাড়ি উঁচু নিচু পথে জোঁকের কামড় খেতে খেতে হাঁটতে হবে এটা একরকম নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়।

বর্ষায় তিনাপ সাইতারকে পাওয়া যায় সবচেয়ে মোহনীয় রূপে। এমনই এক বর্ষায় মুখোমুখি হলাম তিনাপের। সে অবর্ণনীয় সৌন্দর্যের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। ৬৫ ফুট উচ্চতার তিনাপের সামনে দাঁড়ালে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। সেই তুচ্ছতায় ম্লান হয়ে যায় জাগতিক সব দুঃখ আর বিষাদের অনুভূতি। ঝর্ণার পানিতে রংধনুর সাত রঙের খেলা সম্মোহিত করে রাখে মনকে। পানির স্রোতের শব্দের সাথে তুলনা করা যায় না কোনো পার্থিব সুরের। ঝর্ণার অবগাহনে ধুয়ে মুছে যায় জীবনের সব চাওয়া পাওয়ার হিসেব। হয়ে উঠি অন্য আরেক মানুষ, আরও শুদ্ধ, আরও পূর্ণ রূপে।

পাহাড়ে গেলে দল বেঁধে যাওয়া ভালো। এতে নিরাপত্তা বাড়ে, যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। তাই দল বেঁধে রওনা হলাম তিনাপের উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা হয়ে খুব ভোরেই পৌঁছে গেলাম বান্দরবান সদরে। দেরি না করে আগে থেকেই রিজার্ভ করে রাখা চান্দের গাড়িতে রওনা হলাম রুমার উদ্দেশ্যে।

মাঝে মাঝেই গাড়ি থামিয়ে দেখছিলাম মেঘের সমুদ্রে সূর্যোদয়ের রঙের খেলা। যেন অচেনা এক পৃথিবীর দরজা খুলে যায় চোখের সামনে, মনে হয় একটু পা বাড়ালেই পৌঁছে যাব পৃথিবীর বাইরে কোথাও। রুমা পৌঁছে সকালের নাস্তা আর প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে, সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে রওনা হলাম মুনন্যায়াম পাড়ার পথে। রাতটা সেখানেই কাটিয়ে পর দিন সকালে শুরু হলো তিনাপের বাড়ি।

মুনন্যায়াম পাড়ার আর্মি ক্যাম্পকে পিছনে ফেলে অপ্রচলিত এক ট্রেক ধরে আমরা হাঁটা শুরু করলাম গাইডের সাথে। গাইড হিসেবে মুনন্যায়াম পাড়ারই দুইজন আদিবাসী ছিল আমাদের সাথে। বেশ খানিকটা নিচে নেমে ঝিরিতে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম আর ঝিরির সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। আবার শুরু হলো হাঁটা। ঝর্ণা দেখে সেদিনই বান্দরবান পৌঁছে ঢাকার বাস ধরার পরিকল্পনা থাকার কারণে ইচ্ছা থাকায় ঝিরি পথে বা পাহাড়ি পথে সময় কাটানো সম্ভব হয়নি।

প্রায় তিন ঘণ্টা হাঁটার পরে হঠাৎ খাড়া একটা ঢাল পেলাম, যেটা নেমে গেছে তিনাপের কাছে। নীচ থেকে ভেসে আসছে ঝর্ণার শব্দ। দড়ি বেয়ে কোনোরকমে একজন একজন করে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামার মিনিটখানেক পরেই দেখা পেলাম প্রতীক্ষিত সেই সুন্দরী ঝর্ণা তিনাপের। নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কাছে গিয়ে দেখলাম রংধনুর অর্ধ বৃত্ত। সেই অর্ধবৃত্তে নিজেকে আটকে অবগাহন করলাম তিনাপের জলে। ঝর্ণার শীতলতায় ভেসে যাচ্ছিল সব ক্লান্তি, গ্লানি, দুঃখ আর দৈন্যতা। অতঃপর ফেরার পালা। সবুজ পাহাড়ের খাঁজে সৌন্দর্যের চাদরে মোড়ানো তিনাপকে পেছনে রেখে ফিরতে ইচ্ছে না করলেও কিছুটা মন খারাপ আর কিছু সবুজ শীতল সুখস্মৃতির উচ্ছাস, শক্তি আর স্পৃহাকে সাথে করে আবারো ফিরে এলাম শহুরে ব্যাস্ততায়।

যেভাবে যেতে হবেঃ

ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে বান্দরবানে যাবার সরাসরি বাস আছে। বান্দরবান পৌঁছে বাসে করে বা চাদের গাড়ি রিজার্ভ করে রোয়াংছড়ি বা রুমা যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ট্রেকিং করে পাইংক্ষং পাড়া, রনিন পাড়া আর দেবছড়া পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতারে যেমন যাওয়া যায় তেমনি রুমা থেকে মুনন্যায়াম পাড়া পর্যন্ত চান্দের গাড়িতে যেয়ে সেখান থেকেও পৌঁছে যাওয়া যায় গন্তব্য যখন তিনাপের বাড়ি।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

প্রার্থনারত নিশানপ্রার্থনারত নিশান
বাংলাদেশের ডলফিনবাংলাদেশের ডলফিন

About the Author: Aoezora Zinnia

সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস এন্ড ফিস ব্রীডিং বিভাগে কর্মরত আওজোরা জিনিয়া ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। একসময় প্রবাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত জিনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছেন অসংখ্য দেশ। পর্বতারোহণ নিয়েও রয়েছে তার দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন। আর সেই পথ ধরেই তিনি ছিলেন মাউন্ট বাটুর, মাউন্ট ফুজি, মাউন্ট কানামো সহ বিভিন্ন পর্বতারোহণ অভিযানে। বনের সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়, ঝিরি, ঝর্ণার প্রতি তীব্র ভালোবাসার টানে সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়ান থেকে পাহাড়, প্রান্তর থেকে প্রান্তর, বুনোপথ থেকে বুনোপথে।

Sharing does not make you less important!

প্রার্থনারত নিশানপ্রার্থনারত নিশান
বাংলাদেশের ডলফিনবাংলাদেশের ডলফিন

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

প্রার্থনারত নিশানপ্রার্থনারত নিশান
বাংলাদেশের ডলফিনবাংলাদেশের ডলফিন

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!