ঘুম ভাঙল রামিজের ডাকে। হোটেলের ছাদ থেকে নাকি অনন্যা অন্নপূর্ণা আর মচ্ছপুছরে দেখা যাচ্ছে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম বিছানা ছেড়ে। চপ্পল পায়ে সটান ছাদে। তবে প্রথমেই সামনে চোখে পড়লো ফেওয়া লেক (Phewa Lake)। ৭৪১ মি উচ্চতায় অবস্থিত এই লেকটি শুধু পোখারার নয়, গোটা নেপালের এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান। একে পোখারার মধ্যমণিও বলা চলে। লেকের পূর্ব দিকে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, নাইটক্লাব সব মিলে এক মোহময় জগৎ রয়েছে যেটা রাতে কোনো এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। যেন ভেগাসের লাস্যময়ী নেপালি সংস্করণ। এই জায়গাটার নাম লেকসাইড, আর এখানেই আমাদের লেক সিটি হোটেল। লেকের উত্তর দিক বরাবর রয়েছে পাহাড়ের ঢাল, আর সেই ঢালের ওপরেই উঁকি দিচ্ছে অন্নপূর্ণা আর মচ্ছপুছরে! যদিও আবছা তাও এই দুই অসামান্য সুন্দর পর্বতচূড়ার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ মনের মধ্যে থেকে গতকালের তিক্ত অভিজ্ঞতার শেষ রেশটুকুও মিলিয়ে দিল।

ছবি: ফেওয়া লেক

ছবি: ফেওয়া লেক

অর্ণব কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লেক পরিক্রমায়। সারি সারি নীল রঙের ডোঙ্গা বাঁধা লেকের ধারে। বেলা গড়ালেই টুরিস্টরা নৌকাবিহারে বেরোবে। লেকের ধার বরাবর রাস্তায় পথচারীদের ভিড়। কেউ যোগা করছে, তো কেউ বাচ্চাদের ক্যারাটে শেখাচ্ছে, তো কেউ শুধু মর্নিং ওয়াকে ব্যস্ত, তো কেউ একাকী বেঞ্চে বসে সকালের শেষ মাধুর্যটুকু শুষে নিচ্ছে। সারি দিয়ে রয়েছে অজস্র ক্যাফে কিন্তু তাদের সাজসজ্জার বহর আমাদের পকেটকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।

হোটেলে ফিরে এসে কেয়ারটেকার রমেশ ভাইয়ার সাথে আলাপ হলো। নিজেরা লাইন দেব না বলে তাকে আমাদের প্রত্যেকের ফটো আর আইডি কার্ড দিয়ে দিলাম পারমিট বানানোর জন্য। পারমিট বলতে দুটো জিনিস। Trekkers Information Management System (TIMS) কার্ড আর অন্নপূর্ণা কনজার্ভেশন এরিয়াতে ঢোকার পারমিট। প্রত্যেককেই এই TIMS কার্ড টা নিতে হবে। এতে নাম, দেশ, ট্রেকিংয়ের দিন ক্ষণ, মোবাইল নাম্বার সব লেখা থাকবে। ট্রেকিংয়ের সময় যেখানে যেখানে চেকপোস্ট থাকবে এই কার্ড দেখিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। ফলে সরকারের কাছে ট্রেকারদের অবস্থান সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকবে। যদি কখনো জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধারকার্য চালাতে হয় এই ডাটাবেস থেকে পাওয়া তথ্য অনেকটা সাহায্য করবে। ভারতেও এই ইনফরমেশন সিস্টেম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু করা উচিত। তাহলে ট্রেকার নিখোঁজ বা ট্রেকিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। এই TIMS কার্ড নেপালের যে অঞ্চলেই ট্রেক হোক না কেন বাধ্যতামূলক। পারমিট দুটো হাতে পাওয়ার পর বেলা ১০:৩০ টা নাগাদ ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা গাড়িতে করে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। সাথে নেপালের একটা Ncell সিমও নেওয়া হয়েছে কারণ এখানে ভারতের কোনো সিম কাজ করবে না।

পশ্চিম দিক বরাবর আমাদের গাড়ি এগিয়ে চললো। বেলা ২টা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম শিয়াউলি বাজার (Syauli Bazar), গাড়ি চলাচলের শেষ প্রান্ত। এইখান থেকেই আমাদের হাঁটি হাঁটি পা পা শুরু করতে হবে। তার আগে রাস্তার ধারে একটা হোটেলে লাঞ্চ সেরে নিলাম। নাম প্রিয়া রেস্টুরেন্ট এন্ড লজ। পাশেই বয়ে চলেছে মোদিখোলা। খোলা একটি নেপালি শব্দ যার অর্থ নদী। অন্নপূর্ণা ও তার পারিপার্শ্বিক পর্বতশ্রেণীর হিমবাহ থেকে সৃষ্ট এই মোদিখোলার গতিপথ ধরেই শুরু হবে আমাদের যাত্রা। ব্ল্যাক টি আর এগ চাউ গলাধঃকরণ করে ভাবছি একটু মিষ্টি কিছু হলে পুরো জমে ক্ষীর হয়ে যেত, হঠাৎ দোকানের একটি ছোট বাচ্চার দিকে চোখ চলে গেল। প্রিয়া রেস্টুরেন্টে এইরকম প্রিয় মিষ্টি মুখ দেখতে পাব সেটা আশ্চর্য নয় কিন্তু যেটা সব থেকে আকর্ষণীয় সেটা হলো তার গোল গোল দুটি চোখ। শিশু বয়সেই কি গভীরতায় পরিপূর্ন ওই দুটি মনি। সে দৃষ্টিতে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। আমরা সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লাম এই ছোট্ট মডেল কে ক্যামেরা বন্দী করতে। মডেল কিছুক্ষণ বেশ আনন্দের সাথেই সহযোগিতা করল, কিন্তু তারপর এই অনাবশ্যক লাইমলাইটে বিরক্ত হয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে দরজার আড়ালে হারিয়ে গেলো। অতঃপর আমরাও ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়লাম অনন্যা অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্প অভিযানে !

চলবে……

• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ১)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৩)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৪)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৫)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৬)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৭)
• অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (শেষ পর্ব)

লেখকঃ অবকাশ অধিকারী।
পেশায় প্রকৌশলী, ঝাড়খণ্ডের মাইথনে নিবাস। নেশা ট্রেকিং করা। বছরে অন্তত দু/তিন বার বেরিয়ে পড়েন হিমালায়ের উদ্দেশ্যে।

Follow us on

Subscribe and stay up to date.

BUY YOUR
HAMMOCK
NOW

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

সাতলার অপূর্ব শাপলা বিলসাতলার অপূর্ব শাপলা বিল
অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণেঅনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৩)

About the Author: Living with Forest

Sharing does not make you less important!

সাতলার অপূর্ব শাপলা বিলসাতলার অপূর্ব শাপলা বিল
অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণেঅনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৩)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

সাতলার অপূর্ব শাপলা বিলসাতলার অপূর্ব শাপলা বিল
অনন্যা অন্নপূর্ণার চরণেঅনন্যা অন্নপূর্ণার চরণে (পর্ব ৩)

Sharing does not make you less important!

বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।

|Discussion

Leave A Comment

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!

Related Posts and Articles

If you enjoyed reading this, then please explore our other post and articles below!