আমরা এখন আউটডোর হ্যাকস্ -এর নিয়মিত পর্বের তৃতীয় অধ্যায়ের পাতায় আছি। “অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু” প্রবন্ধে আমাদের আলোচনার পুরোটা জুড়েই ছিলো অ্যাডভেঞ্চারের পথে নানান ইক্যুয়িপমেন্ট বা সরঞ্জামাদির প্রাথমিক তালিকা। এতো এতো জিনিসপত্রের বহর দেখে আপনাদের হয়ত বেশ বিরক্ত লাগছে। কিন্তু কি আর করা, পথে যেহেতু নেমেছেন, বোঝা তো বইতেই হবে! তাছাড়া এই বিশাল প্যাকিং লিস্ট -এর উপর যেহেতু আপনার অভিযানের সফলতা নির্ভর করছে তদুপরি পৈত্রিক প্রাণ রক্ষায়ও যেহেতু এই বিপুল বোঝার বিশেষ ভূমিকাও অপরিসীম সেহেতু, এ নিয়ে বিরক্ত হয়ে আপাতত কোন লাভ নেই।
আর তাই আপনার বিরক্তি, উৎসাহ, ভাবনা, উচ্ছাস সব মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে, আসুন জেনে নেই আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র সম্পর্কে যেগুলো আপনার ব্যাকপ্যাকের ওজন আরো কিছু বাড়িয়ে দিলেও এসব সরঞ্জামাদি আপনার সাথে থাকতেই হবে। অতএব, আপনার প্যাকিং লিস্ট -টা নিয়ে আবারো ঝাপিয়ে পড়ুন আউটডোর হ্যাকস্ -এর পাতায়।
Personal Equipment (ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র):
- জুতো: যেকোন অভিযানে একজোড়া ভালো জুতোর গুরুত্ব সীমাহীন। আপনার অভিযানের ধরণ অনুযায়ী জুতো বিভিন্ন রকমের হলেও, প্রাথমিক ভাবে আরামদায়ক, হাই-নেক, খুব ভালো গ্রীপ আছে এমন রাবার সোলের জুতো নির্বাচন করুন।
- রাবার স্যান্ডেল: ক্যাম্প গ্রাউন্ডে একটু আধটু হাঁটাহাঁটির জন্য বা কাছে-পিঠে ঘুরোঘুরির জন্য সাথে একজোড়া রাবারের স্যান্ডেল থাকা খুব প্রয়োজন। আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হলো, বাকলস্ আছে এমন একজোড়া ভাল স্পোর্টস স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।
- জামা-কাপড়: অভিযানের ধরণ এবং সময়সীমা অনুযায়ী প্রয়োজনমত শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, শর্টস, ২/৩ জোড়া মোজা, আন্ডার গার্মেন্টস, সান-ক্যাপ ইত্যাদি গুছিয়ে নিন। জামা-কাপড়ের ক্ষেত্রে ফুল স্লীভ শার্ট/টি-শার্ট এবং কুইক ড্রাই বা খুব দ্রুত শুকোতে সক্ষম এমন কাপড়-চোপড় নির্বাচন করুন।
- শীতের প্রস্তুতি: শীতকালীন অভিযান কিংবা শীতল কোন গন্তব্য যদি আপনার অভিযানের লক্ষ্য হয় তাহলে পর্যাপ্ত শীতের প্রস্তুতি রাখুন। অভিযান ভেদে উইন্ড ব্রেকার, জ্যাকেট, সোয়েটার, উলেন মাংকি ক্যাপ, বালাক্লাভা বা ব্যান্ডানা, উলেন মোজা, গ্লাভস, থার্মাল ইনার বা বেইজ লেয়ার, ডাউন গ্লাভস ইত্যাদি ইত্যাদি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সাথে রাখুন। মনে রাখবেন, ঠান্ডা আপনার অভিযান এবং আপনার জীবন দুটোরই সমাপ্তি টেনে দিতে পারে। অতএব, প্রস্তুত থাকুন।
- খাওয়া দাওয়ার সরঞ্জাম: নিজের ব্যবহারের প্লেট, গ্লাস, চামচ, পানির বোতল ইত্যাদি সাথে রাখুন।
- প্রসাধনী: ব্যক্তিগত প্রসাধনি যেমন ক্রীম, পেট্রোলিয়াম জেলী, সান-ব্লক, শ্যাম্পু, সাবান, টুথপেস্ট, ব্রাশ ইত্যাদি নিতে ভুলবেন না। আলাদা করে আমার মতামত জানতে চাইলে বলবো অবশ্যই পারফিউম বা ডিওডোরেন্ট সাথে রাখুন। বিপদে কাজে লাগতে পারে।
- হেড-ল্যাম্প: বড় কোন অ্যাডভেঞ্চার কিংবা নিতান্তই দুয়েক দিনের ক্যাম্পিং যেখানেই আপনি যান না কেন, রাতে আপনাকে পথ চলতে হবেই। এছাড়াও রাত্রি বেলা নানাবিধ প্রয়োজন অথবা ঝুকিপূর্ণ পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আলো ছাড়া আপনি অচল। অতএব, সাথে খুব ভাল মানের একটা হেড-ল্যাম্প বা টর্চলাইট এবং পর্যাপ্ত ব্যাটারি রাখতেই হবে!
- সান-গ্লাস: অভিযানের পথে বিশেষত পর্বতের পথে সান-গ্লাস একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। অভিযানের ধরণ অনুযায়ী অতি-বেগুনীরশ্মি বা UV ভ্যালু নির্ধারণ করে সান-গ্লাস নিন। তুষার বা বরফের পথে সাইড প্রোটেকশন আছে এমন সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
- রোপ বা দড়ি: যেকোন ধরণের ট্রেকিং, ক্যাম্পিং বা বড় কোন অভিযানই হোক না কেন অবশ্যই সাথে একটা ৬ অথবা ৭ মি:মি: সাইজের নুন্যতম ৫ মিটার দড়ি সাথে রাখুন। দূর্গম পথে আপনার জীবন বাঁচাতে পারে এই দড়ি।
- ব্যাক্তিগত ঔষধপত্র: নিয়মিত সেবন করতে হয় এমন কোন ঔষধপত্র থাকলে তা নিজের সাথে রাখুন।
- আগুন: নিজের সাথে সবসময় আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখুন। এক্ষেত্রে ভাল লাইটার, ম্যাগনেসিয়াম ফায়ার স্টার্টার ইত্যাদি রাখতে পারেন।
- হুইসেল: যেকোন বিপদ বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে হুইসেল আপনাকে সাহায্য করবে তাই একটা ভাল হুইসেল সাথে রাখুন। তবে অযথা হুইসেল বাজিয়ে পরিবেশ নষ্ট না করার অনুরোধ থাকলো।
Other Essential Equipment:
- জিপিএস ডিভাইস এবং পর্যাপ্ত ব্যাটারী।
- কম্পাস বা দিকদর্শন যন্ত্র।
- টোপোগ্রাফিক এবং সার্ভে ম্যাপের দুটো কপি এমনভাবে সাথে নিন যেন কোনভাবেই নষ্ট হয়ে না যায়।
**হারিয়ে গেলে বা পথ ভুল করলে উপরের এই তিনটা জিনিস আপনার জীবন বাঁচাবে। অতএব, আপনার প্যাকিং লিস্ট -টায় ওরা আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
- ফার্স্ট এইড কিট: দলের সদস্যসংখ্যার সাথে মিলিয়ে ফার্স্ট এইড কিট গুছিয়ে নিন।
- সারাই করার যন্ত্রপাতি: জুতো বা ব্যাগ সেলাই করা যন্ত্রপাতি, ছোটখাটো মাল্টি-টুলস সেট ইত্যাদি সাথে রাখুন।
- খাবার বা রেশন: জীবনযাপনের সাথে খাবারের ভুমিকা কতখানি তা পুরোপুরি টের পাওয়া যায় অভিযানের পথে। আর তাই দলের সদস্যসংখ্যা, অভিযানের ধরণ, সময়সীমা, ব্যাকআপ প্লান ইত্যাদি সার্বিক দিক বিবেচনা করে খাবারের তালিকা তৈরি করুন। বারবার যাচাই করে নিন কোন কিছু বাদ পড়ে গেছে কিনা। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের সাহায্য নিন।
যারা প্যাকিং লিস্ট কিংবা নানাবিধ সরঞ্জামগুলো সম্পর্কে বুঝে গেছেন তারা এবার লিস্টের সাথে মিলিয়ে সবকিছু সুন্দরভাবে গুছিয়ে নিয়ে শুরু করুন আপনার অভিযান। আর যাদের মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে তারা আরেকটু অপেক্ষা করুন। পরবর্তি অধ্যায়গুলোতে এই সবকিছু প্রসঙ্গে আমরা আরো অনেক বিশদ আলোচনা করবো এবং অভিযানের পথের আরো হাজারো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আউটডোর হ্যাকস্ -এর পাতায়।
- “অভিযানের পরিকল্পনা”
- “অ্যাডভেঞ্চার বা ক্যাম্পিংয়ে প্রয়োজনীয় যা কিছু“
- “ক্যাম্পিংয়ের আদ্যোপান্ত“
- “তাবুর নাড়ি নক্ষত্র“
- “তাবু ছাড়াই তৈরি করুন শেল্টার“
- “অ্যাডভেঞ্চারে প্রয়োজনীয় নটস“
- “অভিযানে আপনার সাথে আগুন আছে তো!”
- “জলপান যেন বিষপান না হয়!”
- “অভিযানের পথে কি কি খাবার নিয়ে যাবেন!”
- পরবর্তি আউটডোর হ্যাকস্ –এর জন্য চোখ রাখুন Living with Forest –এর পাতায়।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।