ক্লেমের সাথে আমার পরিচয় লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াস শহরের এক হোস্টেলে। সাধারণত যাদের বাজেট কম থাকে তারাই হোস্টেলে থাকাটা বেছে নেয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই তাই খরচ বাঁচাতে হোস্টেল বুকিং দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র মেয়েদের ডর্মে জায়গা না পাওয়াতে মিক্স ডর্মে বুকিং দিতে হয়েছিল। সেই মিক্স ডর্মের ভেতরে ক্লেমের সাথে আমার প্রথম দেখা।
ডর্মগুলোতে যে যার মত নিজের জায়গায় থাকে এবং এমন কিছু সাধারণত করে না যাতে অন্যরা বিরক্তবোধ করতে পারে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়, আমাদের সেই রুমে এমন একজন ছিল যে ভীষণ প্রলাপ বকছিল। হয়তো অতিরিক্ত পানের কারণে সেটা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চুপচাপ সহ্য করে নিজের মত থাকাটাই শ্রেয়। একটা সময় ভীষণ বিরক্ত লাগতে থাকলে আমি ডর্ম থেকে বেরিয়ে কমন জায়গায় গিয়ে বসি। একটু পরে ক্লেমও সেখানে এসে উপস্থিত। কথা বলা শুরু হতেই কথার রেলগাড়ী ছুটতে থাকল। দুজন সম্পূর্ণ দুই ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠায় নানান বৈচিত্রময় কথা চলতেই থাকল। সেই থেকে আমরা দুজন দারুণ বন্ধু।
ক্লেমের জন্ম ফ্রান্সে। কিন্তু কাজের সূত্রে সে আয়ারল্যান্ডে থাকে। ক্লেমের হল যাযাবর মন। সময়-সুযোগ আর কটা টাকা হাতে পেলেই সে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় আর আমাকে জ্বালানোর জন্য সেসব জায়গা থেকে পোষ্ট কার্ড পাঠায়।
আমিও যখন মাঝে মধ্যে এদিক সেদিক যাই, ওর কাছ থেকে ” I hate you” শোনার জন্য আমিও ওকে নানান জায়গা থেকে পোষ্ট কার্ড পাঠাই এবং সেজন্য আমি আলাদা করে টাকা রেখে দেই কারণ অনেক সময়ই ঘুরতে ঘুরতে হাত খালি হয়ে যায়….. কোন কিছু কেনার মত টাকা থাকেনা। একবার নেপাল গিয়ে ভক্তপুর থেকে একটা পোষ্ট কার্ড কিনলাম ওর জন্য। কেনার সময় জেনে নিয়েছিলাম যে আয়ারল্যান্ডে পোষ্ট করতে ৩৫ রূপি লাগবে। সেই হিসেবে ৩৫ রুপী খামে আলাদা করে রাখতে গিয়েও বেমালুম ভুলে গেলাম।
যে সময়টা নেপাল ছিলাম, ভারত নেপালের সাথে হঠাৎ করে বর্ডার বন্ধ করে দিল। নেপালের ভেতরে তেল, গ্যাস আরো অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস, যা ভারত থেকে আসত, স্বল্পতার কারণে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হল। নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। যার ফলে শেষের দুই দিন আমাদের বাজেটের বাইরে খরচ হয়েছে। এয়ারপোর্টে পৌঁছাবার ট্যাক্সি ভাড়াটা আলাদা করে রেখে বাসার জন্য এটাসেটা উপহার কিনলাম। কাজেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে ট্যাক্সি ভাড়া দেবার পরে দেখি ৪০ রুপি অবশিষ্ট আছে। যাই হোক হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম যে ক্লেমকে পোষ্ট কার্ডটা পাঠাতে পারব।
কিন্তু বিধিবাম! পোষ্ট অফিসে গিয়ে শুনি কার্ড পাঠাতে ৪৫ রুপি লাগবে!!! কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ৫ রুপি এখন আমি কই পাই!!!! একবার মনে হইলো দেশী কারো কাছে চাইব ৫ রুপি। সেই উদ্দেশ্যে চেক ইন কাউন্টারের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু কারো কাছে ৫ রুপী চাইতে পারলাম না। আমার সাথে কিছু “Kopiko” চকলেট ছিল। আমার সঙ্গী বুদ্ধি দিলেন চল এই গুলো বিক্রি করি। অনেক ভেবে চিন্তেও যখন আর অন্য কোন উপায় পাচ্ছিলাম না তাই যেই কথা সেই কাজ। তখন খুঁজতে শুরু করলাম কার কাছে চকলেট বিক্রি করা যায়। আবার চেক ইন কাউন্টার একবার চক্কর দিয়ে এলাম। ওয়েটিং লাউন্জে যারা বসে ছিল, তাদের সবার উপরে চোখ বুলিয়ে গেলাম, কিন্তু এমন কাউকে মনে ধরলো না যাকে গিয়ে বলা যায় আমার কাছ থেকে একটা চকলেট কিনেন। শেষে পোষ্ট অফিসের লোকের কাছে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলে তাদের কাছেই ৪ টা চকলেট ৫ রুপি তে বিক্রি করে, ৪০ রুপীর সাথে সেই ৫ রুপী যোগ করে পোষ্ট কার্ড টা পাঠালাম।
আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। দেশে ফিরে এসে কাপড় ধুতে গিয়ে দেখি আমার জিনসের প্যান্টের পকেটে ১২০ রুপি চুপচাপ শুয়ে আছে।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।