বিশাল মহাকাশে ভাসতে থাকা পৃথিবী নামধারী এই ছোট্ট সুন্দর নীল গ্রহটার চেয়েও হয়ত বেশী সুন্দর প্রকৃতির ইচ্ছেমতন রঙে সাজানো এই গ্রহের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসাধারণ কিছু সৃস্টি। একটা ছোট্ট আর্টিকেলে এইসব দারুন সুন্দরের দলকে নিয়ে বিশদভাবে লিখতে যাওয়া নিতান্তই অপচেষ্টার নামান্তর মাত্র আর তাই আসুন খুব দ্রুত এবং ছোট্ট করে জেনে নিই আমাদের প্রিয় আবাসভুমি পৃথিবীর অসাধারণ সুন্দর সাতটি স্থান সম্পর্কে।
রেডবীচ (Red Beach)
কি মনে হচ্ছে!?! ফটোশপে ইনফ্রারেড ফিল্টার দিয়ে প্রসেস করা কোন ছবি?? না ব্যাপারটা আসলে তা নয়। উপরের ছবিটি চীনের প্যানজিং অঞ্চলের রেড বীচ নামে পরিচিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খাগড়া জলাভূমি। গ্রীস্মকালে সবুজের চাদরে ঢাকা থাকলেও এপ্রিল-মে মাস থেকে হালকা লাল রঙ নিয়ে বেড়ে উঠে শরতের কাছাকাছি সময়ে গাঢ় লাল রঙে পরিবর্তিত হওয়া একপ্রকার সামুদ্রিক উদ্ভিদের কারনেই এই জায়গাটার রঙ এমন অদ্ভ্যুৎ লাল। বিলুপ্তপ্রায় ক্রাউন ক্রেইন (Crown Crane) এবং ব্ল্যাক মাউথ গাল (Black Mouth Gull) ছাড়াও প্রায় চারশোর কাছাকাছি প্রজাতির বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এবং দুইশোর-ও বেশী প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত এই দারুন সুন্দর বীচের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এই বীচের সামান্য কিছু অংশ সরকারীভাবে পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত রেখে বাকী প্রায় পুরোটা জুড়ে সমস্ত রকম পর্যটন কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। তবে হতাশ হবার কিছু নেই। উম্মুক্ত অংশের ব্যাপ্তিও কিন্তু খুব একটা কম নয়।
হোয়াইটহেভেনবীচ (Whitehaven Beach)
প্রায় ৯৮% ভাগ বিশুদ্ধ সিলিকার উপস্থিতি হোয়াইট হেভেন বীচকে একেবারে ধবধবে সাদা বানানোর জন্য দায়ী। প্রকৃতি যেন সেখানে উদার!! সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ঝকঝকে সাদা সমুদ্র সৈকত, নীল জলরাশী, লেগুন, সবুজ পাহাড়, ডাইভিং, সুইমিং, সেইলিং সব যেন থরে থরে সাজানো। পৃথিবীর সেরা পরিবেশ বান্ধব বীচ হিসেবে খ্যাত এই বীচে ময়লা আবর্জনা ফেলা এবং ধুমপান সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এমনকি পোষা কুকুর নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও এখানে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় পর্যটন স্থান এয়ারলি বীচের খুব কাছেই বিখ্যাত গ্রেট বেরিয়ার রীফ দিয়ে সুরক্ষিত হোয়াইট সানডে দ্বীপের একপাশে উজ্জল সাদায় উদ্ভাসিত হোয়াইট হেভেন বীচ নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি।
দ্যাফেইরীপুলসঅনদ্যাআইলঅফস্কাই (The Fairy Pools of the Isle of Skye)
স্কটল্যান্ডের গ্ল্যান ব্রিটল ফরেস্টের দক্ষিন-পূর্ব দিকে কোলিনস পাহাড়ের একটা নদীতে প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হওয়া অদ্ভ্যুৎ সুন্দর অনেকগুলো প্রাকৃতিক সুইমিং পুলের সমষ্টিগত নাম দ্যা ফেইরী পুলস । কবে এবং কেন এই পুলগুলো-কে পরীদের সুইমিং পুল হিসেবে নামকরন করা হয় তা কেউ তেমন না জানলেও পৃথিবীর অসংখ্য অভিযানপ্রিয় সাতারুদের কাছে এই সুইমিং পুলগুলো এক বিশেষ আকর্ষন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে তাদের বিশালতা, ব্যাপ্তি আর রুপবৈচিত্রের কারনে।
তিয়ানজিপর্বতমালা (Tianzi Mountains)
অ্যাভেটার ছবির সেই বিখ্যাত প্যানডোরা আসলে আমাদের পৃথিবীতেই। চীনের হিউনান প্রদেশের জাংজাজে জেলায় অবস্থিত তিয়ানজি পর্বতমালায় প্রায় ৬৭ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে দাড়িয়ে থাকা মার্বেল পাথরে তৈরী বিশাল বিশাল সব স্তম্ভের মত পর্বতগুলোর উচ্চতা কোথাও কোথাও ১২০০ মিটার পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। এই পর্বতমালার এবং এই পর্বতমালায় অবস্থিত বিভিন্ন পর্বতের নামকরণ এবং ইতিহাস নিয়ে অনেক প্রাচীন লোককথা প্রচলিত থাকলেও তুজিয়া (Tujia) সম্প্রদায়ের জিয়াং ডাকুন(Xiang Dakun) নামের এক ব্যাক্তি এই পর্বতমালার নামকরন করেন বলে জানা যায়। প্রচন্ড মেঘের দিন, চাঁদের আলোয়, সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের সময় এবং তুষারাবৃত শীত এই চারটা ঋতুতে চার রুপে শোভিত, স্নায়ু জমিয়ে দেয়া তিয়ানজি পর্বতমালা দেখতে হলে প্রচন্ড কষ্টকর অভিযান ছাড়াও রয়েছে কাঁচ দিয়ে তৈরী রাস্তা আর ক্যাবল কারের ব্যাবস্থা।
সালারডেইউনি (Salar de Uyuni)
সমুদ্রপৃষ্টের ৩৬৫৬ মিটার উচ্চতায় প্রায় ১১০০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে প্রাচীন এক লবনাক্ত লেকের শুকিয়ে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট বিশাল এক লবনাক্ত সমভুমির নাম সালার ডে ইউনি। পৃথিবীর পুরো লিথিয়ামের চাহিদার ৭০% ভাগ পুরন করতে সক্ষম এবং সবচেয়ে বিশালাকৃতির আয়না বলে খ্যাত সালার ডে ইউনি আন্দিজ পর্বতমালার কাছেই দক্ষিন-পশ্চিম বলিভিয়ার ড্যানিয়েল ক্যাম্পোস প্রদেশে অবস্থিত। বৃষ্টির সময়গুলোতে কয়েক মিটার পুরু লবনের স্তরে ঢেকে থাকা এই বিশাল সমভুমিতে প্রতিবিম্বিত আকাশ এবং বস্তুর প্রতিচ্ছবির কারনে এটিকে একটা বিশাল আয়না বলে ভুল হতে পারে খুব সহজেই।
ম্যান্ডেনহলআইসকেইভ (Mendenhall Ice Caves)
ফাঁপা ম্যান্ডেনহল হিমবাহের বরফে মোড়ানো ছাদের নীচ দিয়ে নিজের খেয়ালে ছুটে যাওয়া বরফ গলা জল আর অপার্থিব নীলচে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে থাকা সুড়ঙ্গপথ-ই হলো ম্যান্ডেনহল আইস কেইভের পরিচিতি। ম্যান্ডেনহল আইস কেইভ বা বরফের গুহার অবস্থান মুলত ম্যান্ডেনহল গ্লেসিয়ারে যেটি আলাস্কার জ্যুনো শহরের খুব কাছের ম্যান্ডেনহল ভ্যালিতে অবস্থিত। প্রায় পাঁচ ঘন্টার প্রচন্ড ক্লান্তিকর এবং ঝুকিপূর্ন পথে নানান বিপদের সম্মুখীন হয়েও প্রতি বছর হাজারো মানুষ ছুটে যান নীলচে বরফের এই অসাধারণ সুন্দর প্রাকৃতিক গুহার জগৎটা দেখতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অদ্ভুৎ, অপার্থিব ইত্যাদি নানা বিশেষনে ভুষিত করা হলেও গ্লোবাল ওয়ার্মিং কিংবা পৃথিবীর ভুমি ও বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে প্রতিদিন একটু একটু করে অবলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ম্যান্ডেনহল আইস কেইভ।
মাউন্টরোরেইমা (Mount Roraima)
প্রাকৃতিকভাবে ভাগ করা ভিনেজুয়েলা, গায়ানা, ব্রাজিল এই তিন দেশের সীমান্তে প্রকান্ড একটা টেবিলের মত দেখতে মাউন্ট রোরেইমা গঠনশৈলীর দিক থেকে পৃথিবীর প্রাচীনতম পর্বতগুলোর একটি। চারপাশে প্রায় ৪০০মিটারের খাড়া দেয়ালের মাথায় ৩১ বর্গকিলোমিটারের প্রশ্বস্ত চুড়া নিয়ে দাড়িয়ে থাকা এই পর্বত সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ২৭৭২ মিটার উচু। অভিযাত্রী স্যার ওয়াল্টার রালি (Sir Walter Raleigh) ১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে এই পর্বত আবিস্কার করেন। ভাড়া করা বিমান বা হেলিকপ্টার ছাড়াও স্থানীয় আদিবাসীদের সহায়তায় এই পর্বতের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো যায় ইচ্ছেমতন।
Follow us on
Subscribe and stay up to date.
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।
বন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের স্বার্থে বেড়াতে গিয়ে অহেতুক চিৎকার চেঁচামেচি এবং যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। অপচনশীল যেকোন ধরনের আবর্জনা যেমন পলিব্যাগ, বিভিন্ন রকম প্লাস্টিক প্যাকেট, যে কোন প্লাস্টিক এবং ধাতব দ্রব্য ইত্যাদি নিজেদের সাথে নিয়ে এসে উপযুক্তভাবে ধ্বংস করুন। এই পৃথিবীটা আমাদের অতএব, এ পৃথিবীটা সুস্থ রাখার দায়িত্বও আমাদের।